হাতির পিঠে ভারবহন কতটা অমানবিক?

হাতির পিঠে ভারবহন কতটা অমানবিক?

হাতি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ও শক্তিশালী প্রাণী। একটি পূর্ণবয়স্ক হাতি গড়ে ৪,০০০-৬,০০০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে এবং এর শুঁড় এতটাই শক্তিশালী যে এটি প্রায় ৩০০ কেজি পর্যন্ত ওজন অনায়াসে তুলতে পারে। হাতির এই অতিমানবীয় শক্তি দেখে অনেকেই মনে করতে পারে যে এর পিঠও অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ভার বহনের জন্য উপযোগী। তবে প্রকৃতির এক অদ্ভুত বৈপরীত্য হলো, হাতির পিঠ প্রকৃতিগতভাবে ভার বহনের জন্য আদৌও গঠিত হয়নি।


হাতির মেরুদণ্ডের গঠন দেখলেই এই বাস্তবতা পরিষ্কার হয়ে যায়। হাতির মেরুদণ্ড বাঁকানো এবং কিছুটা নিচের দিকে ঝুলে থাকে, যেখানে ঘোড়ার মেরুদণ্ড তুলনামূলকভাবে সোজা ও শক্তভাবে সংযুক্ত থাকে। ঘোড়ার মেরুদণ্ডের হাড়গুলো পরস্পরের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জোড়া লাগানো, যা তাদের পিঠে ভারী জিনিস বা যাত্রী বহনের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। এছাড়া, ঘোড়ার পিঠের পেশিগুলো ভারসাম্যপূর্ণ ও শক্তিশালী হওয়ায় অতিরিক্ত ওজনের চাপ সরাসরি মেরুদণ্ডে না পড়ে, বরং পেশির মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। হাজার বছর ধরে কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে ঘোড়াকে মানুষের বাহন হিসেবে উপযোগী করে তোলা হয়েছে, যেখানে হাতির ক্ষেত্রে এমন কোনো অভিযোজন ঘটেনি।


অন্যদিকে, হাতির কঙ্কালের গঠন বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, তাদের মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর মধ্যে ফাঁকা জায়গা তুলনামূলক বেশি থাকে। এই ফাঁকা জায়গার কারণে হাতি সহজেই নড়াচড়া করতে পারে, যা তাদের বিশাল আকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর ফলে ভারী জিনিস বহনের ক্ষেত্রে তাদের পিঠ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাতির পিঠ চ্যাপ্টা নয়, বরং কিছুটা গোলাকার প্রকৃতির, যা ভার বহনের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা সৃষ্টি করে। ভারী কিছু চাপলে তা পিঠের দুই পাশে সমানভাবে বিতরণ হয় না এবং মেরুদণ্ডের উপর সরাসরি চাপ পড়ে। ফলে দীর্ঘ সময় ভার বহন করলে হাতির মেরুদণ্ডে স্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়। এছাড়া, হাতির শারীরিক শক্তির মূল উৎস এর পায়ের পেশি ও শুঁড়। তাদের পিঠের পেশি তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং ভারী ওজন নেওয়ার উপযোগী নয়। একটি হাতির ভরকেন্দ্র ভূমির তুলনায় বেশ ওপরে থাকে, ফলে অতিরিক্ত ভার চাপানো হলে তারা সহজেই ভারসাম্য হারাতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এটি হাতির চলাচলের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।


বহু বছর ধরে মানুষ হাতিকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করে আসছে, বিশেষ করে পর্যটন শিল্পে হাতির পিঠে চড়ার প্রচলন দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা ও প্রাণী কল্যাণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, হাতির পিঠে চড়ানো তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভারী কাঠামো (যেমন হাওদা বা কাঠের আসন) বেঁধে যাত্রী বহন করানো হলে তা হাতির মেরুদণ্ডে স্থায়ী ব্যথা, ক্ষত, এমনকি পঙ্গুত্বের কারণ হতে পারে।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *