অজাচার এবং একটি টিকে থাকার গল্প।

অজাচার এবং টিকে থাকার গল্প।
অজাচার এবং টিকে থাকার গল্প।

এলিফ্যান্ট সিলের দুইটি প্রজাতি পৃথিবীতে অস্তিত্বমান- নর্দার্ন এলিফ্যান্ট সিল এবং সাউদার্ন এলিফ্যান্ট সিল। এর মধ্যে নর্দার্ন এলিফ্যান্ট সিলের বাসস্থান প্রশান্ত মহাসাগরীয় পূর্ববর্তী অঞ্চলে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে অতিরিক্ত শিকারের ফলে এই নর্দার্ন এলিফ্যান্ট সিল বিলুপ্তির একদম দ্বারপ্রান্তে পৌছে যায়, জোসেফ হফম্যানের গবেষণা অনুসারে এদের সদস্য সংখ্যা তখন ছিলো মাত্র ২৫ টি।


এমতাবস্থায় সাধারণত কোনো পপুলেশন বা প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনা একদমই থাকেনা বলা চলে। কোনো পপুলেশনের সদস্য সংখ্যা একেবারে কম হয় যখন তখন নিজের আত্মীয় এবং পারিবারিক সদস্যদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে নতুন বংশধর সৃষ্টির সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যায়। এর ফলে ক্ষতিকর জেনেটিক মিউটেশনগুলো প্রচ্ছন্ন অবস্থা হতে প্রকট অবস্থায় চলে আসে এবং সৃষ্টি হয় অসংখ্য জিনগত রোগ-জরা, উপযুক্ত যৌনসঙ্গীর অভাবে এই অজাচারজনিত রোগ-জরার হার প্রতি প্রজন্মে সূচকীয় হারে বাড়তেই থাকে। পুঁথিগত ভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয়, “ইনব্রিডিং ডিপ্রেশন”। ইনব্রিডিং ডিপ্রেশন বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায় চলে আসে যখন উক্ত পপুলেশনের বিলুপ্তি সুনিশ্চিত হয়ে যায়।


আশ্চর্যজনকভাবে, নর্দার্ন এলিফ্যান্ট সিলের বিলুপ্তি তো ঘটেইনি, বরং সাম্প্রতিক প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে- এদের বর্তমান সংখ্যা প্রায় ২,২৫,০০০!! এলিফ্যান্ট সিল কি তাহলে ইনব্রিডিং ডিপ্রেশন নামক বিষয়টাকে তাচ্ছিল্য করে অজাচারের মাধ্যমে টিকে থাকার লড়াই জিতে গেলো? উত্তর হলো, হ্যাঁ!


কীভাবে নর্দার্ন এলিফ্যান্ট সিল এই ভেলকি দেখালো তা জানার আগে আরেকটা গল্প একটু বলা দরকার। যখন কোনো পপুলেশনের সদস্যসংখ্যা হুট করে কমে যায় তখন ওই পপুলেশনে জেনেটিক ড্রিফট নামে একটা ঘটনা প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে। জেনেটিক ড্রিফটে দেখা যায় বহু জিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আবার বহু জিন সবার মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। পরবর্তীতে ওই পপুলেশন সংখ্যার দিক থেকে আবার বড় হলে তাদের কারও মধ্যেই এইসকল জিন খুঁজে পাওয়া যায় না। এই ঘটনাকে বলে “বোটলনেক ইফেক্ট”। ঠিক এটাই ঘটেছে নর্দার্ন এলিফ্যান্ট সিলের সাথে। অজাচারের মাধ্যমে সৃষ্টি হতে পারে এমন সকল রোগের জন্য দায়ী ক্ষতিকারক জিনের অ্যালিল বিলুপ্ত হয়ে গেছে বোটলনেক ইফেক্টের ফলে। এজন্য চূড়ান্ত পরিমাণে অজাচার ঘটলেও নর্দার্ন এলিফ্যান্ট সিল বিলুপ্ত তো হয়ইনি, বরং প্রায় ২ লক্ষ সদস্যের সুস্থ সবল বৃহৎ এক গোষ্ঠী তৈরী হয়েছে পুনরায়। অজাচারজনিত সমস্যাকে দেখিয়েছে বুড়ো আঙুল!


গল্প এখানেই শেষ নয়। হফম্যানের গবেষণা অনুসারে এই দুই লক্ষ সদস্যের প্রত্যেকেই যেনো একে অন্যেক প্রতিরূপ, নকল। তেমন কোনো জিনগত বৈচিত্র্যতা নেই, না আছে বৈশিষ্ট্যগত বৈচিত্র্য। বোটলনেক ইফেক্ট যে শুধু ক্ষতিকারক জিন বিলুপ্ত হয়েছে এমন নয়, বিলুপ্ত হয়েছে এদের প্রায় সিংহভাগ বৈচিত্রতা। ফলে ভবিষ্যতে কখনো কোনো মহামারী কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ দেখা দিলে নিমেষেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এরা। টিকে থাকার জন্য বৈচিত্র্যতা যে অত্যাবশ্যক!


তথ্যসূত্র:
Nature Ecology and Evolution, Genomic and fitness consequences of a near-extinction event in the northern elephant seal
DOI 10.1038/s41559-024-02533-2

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *