হোমো গণের ইতিহাস
পৃথিবীর ইতিহাসে হোমো গণের মোট চৌদ্দটি প্রজাতির কথা আমরা জানতে পেরেছি আজ অবদি। বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে গত কয়েক লক্ষ বছরে হোমো স্যাপিয়েন্সের সাথে আটটি হোমিনিন সহাবস্থান করেছিলো পৃথিবীতে। তারা হলো: হোমো নিয়ান্ডারথাল, হোমো ডেনিসোভান, হোমো নালেডি, হোমো ইরেক্টাস, হোমো লোঙ্গি, হোমো ফ্লরেসিয়েনসিস, হোমো লুযোনেনসিস ও হোমো রোডেসিয়েনসিস। এদের মধ্যে নিয়ান্ডারথাল, ডেনিসোভান ও ড্রাগন ম্যানের সাথে আমাদের পূর্বপুরুষরা যৌনমিলন ঘটিয়ে বংশবিস্তারও করেছে, যার ফলস্বরূপ আজও পৃথিবীর অনেক অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আমরা এই বিলুপ্ত হোমিনিনদের ডিএনএ এর চিহ্ন খুঁজে পাই। এসব চিহ্নের অংশ হিসেবে এমনসব জিন হোমো স্যাপিয়েন্সরা অর্জন করেছে যা পরবর্তীতে তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনাকে কয়েকগুণ করেছিলো।
এসব বিলুপ্ত হোমিনিনদের মধ্যে ছিল ভাষার ব্যবহার, তারা ব্যবহার করতো পাথরের তৈরি বিভিন্ন সব অস্ত্র, জ্বালানো শিখেছিলো আগুন, এমনকি তারা নিজের স্বজনদের কবরও দিতো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—তারা মুখোমুখি হয়েছিলো আমাদের সাথে, হোমো স্যাপিয়েন্সের সাথে।
আজ থেকে প্রায় আড়াই লাখ বছর আগে, হোমো স্যাপিয়েন্সরা তখনও আফ্রিকার বাইরে পাড়ি জমায় নি, হোমো স্যাপিয়েন্সের পাশাপাশি আফ্রিকা জুড়ে ছিলো এরা, এছাড়া ইউরেশিয়া জুড়েও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো এসব বিলুপ্ত মানব প্রজাতি (যাদের আমরা হোমিনিন বলে থাকি)। সেই মধ্য-প্লাইস্টোসিন যুগের শেষ থেকে আজকের বর্তমান সময়ে এসে সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে কেবল হোমো স্যাপিয়েন্সের কর্তৃত্ব রয়ে গেছে পৃথিবীর উপর। ধরণী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বাকি এই সাতটি মানব প্রজাতি, যাদেরও এ রাজত্বে অধিকার ছিলো।
এদের বিলুপ্তির পিছনে থাকা কারণগুলো নিয়ে গবেষক ও অভিজ্ঞরা বিভিন্ন ধারণা (Postulation), মতবাদ (Hypothesis), কৌশল (Mechanism) প্রস্তাব করেছেন, করে চলেছেন, তবে এখনও এসব হোমিনিনদের বিলুপ্তির পেছনের অনেকগুলো কারণই আমাদের অজানা, আবার অনেকগুলো কারণের তেমন কোনো প্রমাণ নাই।
পাঠকদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে—কিসের উপর ভিত্তি করে এই সাত প্রজাতিকে আমাদের নিজস্ব হোমো গণের অন্তর্ভুক্ত করা হলো? কোন জিনিসগুলো প্রকৃত অর্থে আমাদের মানুষদের মানুষ বলে নিরূপণ করে?
বিগত কয়েক দশক ধরে বিশেষজ্ঞরা এই প্রশ্নটির উত্তর বের করার চেষ্টা করেছেন। যদিও এ নিয়ে অনেক বিতর্ক, পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আছে, তবে কিছু বৈশিষ্ট্য গবেষকরা নির্ধারণ করেছেন যার উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারবো কোনো একটা নির্দিষ্ট প্রাইমেট প্রজাতি আমাদের নিজস্ব গণ (Genus) হোমো র অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা। আর তা হলো কোনো প্রজাতির জীবনধারার অভিযোজনে নিম্নোক্ত চারটি বৈশিষ্ট্য:
- ব্রেইন সাইজ ৬০০ কিউবিক সেন্টিমিটারের থেকে বড় হবে।
- হোমো স্যাপিয়েন্স সদৃশ হাত ও পায়ের দৈর্ঘ্যের অনুপাত (Limb proportion)।
- ভাষার ব্যবহার।
- পাথরের তৈরি অস্ত্র বানানো ও তার ব্যবহার।
এবার চলুন একটু বিস্তারিত আলাপ করা যাক বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আমাদের নিকটাত্মীয় এই আট মানব প্রজাতি সম্পর্কে।
(নীচের প্রতিটি হোমো গণের ছবিতে ক্লিক করলে বিস্তারিত পড়তে পারবেন)।
লেখক: নেওয়াজ
সম্পাদনা: তিকতালিকীয় সদস্যবৃন্দ
কপিরাইট: লেখক, তিকতালিক-Tiktaalik