প্রথম মানব সমাচারঃ পর্ব ২

প্রথম মানব সমাচারঃ পর্ব ২

দুইজন নর-নারী হতে সমগ্র মানবকূলের উত্থান সম্ভব কিনা, সেই প্রসঙ্গে একদফা আলোচনা করেছি বেশ কিছুদিন হলো। আলোচনায় আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো হেটেরোজাইগোসিটি এবং ইনব্রিডিং ডিপ্রেশন কী সেটা জানা। এই হেটেরোজাইগোসিটি এবং ইনব্রিডিং ডিপ্রেশন দিয়ে একটা যুক্তির অবকাঠামো সেখানে আমরা তৈরী করেছিলাম। অনেকদিন পর সেই প্রবন্ধের বিপরীতে যুক্তি দিয়ে জনাব আতিকুর রহমান সাহেবের লেখা প্রবন্ধ চোখে পড়লো যেখানে তিনি তথাকথিত “বৈজ্ঞানিক পন্থায়” আলোচনা করেছেন এবং এই উপসংহারে পৌছেছেন যে, “আলবৎ দুইজন নর-নারী হতে মানবকূলের উত্থান সম্ভব, কোনোভাবেই বিজ্ঞান এটা অস্বীকার করেনা।” আতিকুর সাহেবের লেখার সমালোচনায় আমরা একটু পরে ঢুকবো। আজকে আমাদের প্রথম কাজ হলো পপুলেশন জেনেটিক্স নিয়ে জ্ঞান আরও গভীর করা। চলুন, পপুলেশন জেনেটিক্সের বিভিন্ন মডেল এবং গবেষণার আরেকটু গভীরে প্রবেশ করা যাক।

আমাদের শরীরে মোট ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে। এই ২৩ জোড়ার মধ্যে ৬ নং ক্রোমোজমে “হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন (HLA)” সম্বোধিত একগুচ্ছ জিন থাকে। এই জিন আমাদের টিকে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরা এমন কিছু অ্যামাইনো এসিড কোড করে যা সরাসরি আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে টি-সেলের গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন সরবরাহ হয় HLA এর কোড করা এইসব অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে। ফলে এরা সহজেই বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টিকারী প্যাথোজেন শনাক্ত করতে পারে এবং সেগুলোকে প্রতিরোধও করতে পারে। এই HLA জিনগুচ্ছের একটা জিন HLA-DRB1, অত্যন্ত পলিমর্ফিক। কোনো একটা জিনকে আমরা তখনই পলিমর্ফিক বলতে পারি যখন:

→ কোনো জিনের একাধিক অ্যালিল কোনো গোষ্ঠীতে কিংবা প্রজাতিতে একইসাথে একই সময়কালে উপস্থিত থাকে।

→ এদের নিউক্লিওটাইডের বিন্যাসই এদেরকে মিউটেশন প্রবণ করে তোলে। হ্যাঁ, ঠিকই ভাবছেন। আমরা অনেকক্ষেত্রেই শুনে থাকি কিংবা বলে থাকি মিউটেশন এলোমেলো আর অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘটে। কথা সঠিক। কিন্তু এর মানে কিন্তু এমন না যে মিউটেশনের উপরে কোনোকিছুরই প্রভাব নেই। ডিএনএ-র কোন কোন অঞ্চলে মিউটেশন ঘটতে পারে, কেনো ডিএনএ-র কোনো অঞ্চল বেশি মিউটেশনপ্রবণ, কিরকম পরিস্থিতিতে কিরকম মিউটেশন ঘটতে পারে তা কিন্তু জানা যায়।

→ HLA-DRB1 জিনের একটা অঞ্চলের নাম PBS (পেপটাইড বাইন্ডিং সাইট), এই অংশই মুলত HLA জিনগুচ্ছের ভিন্ন ভিন্ন জিনের ফাংশনে পার্থক্য তৈরী করে। আর এই অংশেই মিউটেশন হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় পয়েন্ট মিউটেশন ঘটে নতুবা নিউক্লিওটাইডের পরস্পর স্থানান্তরের (রিকম্বিনেশন) মাধ্যমে জিনে পরিবর্তন আসে।

→ ধরুন, কোনো একটা জিনের নিউক্লিওটাইড নিন্মোক্ত ধারাবাহিকতায় রয়েছে।

ATGACTGACGTG

এখানে মোট নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা ১২ টি। শুধুমাত্র স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে মোট কয়টি নতুন সিকোয়েন্স তৈরী করা যায় একটু হিসাব করি। উক্ত অংশে-
A আছে 3 বার
T আছে 3 বার
G আছে 4 বার
C আছে 2 বার

সুতরাং, বিন্যাস-সমাবেশের জ্ঞান অনুসারে মোট সিকোয়েন্স হবে 12! ÷ (3!×3!×4!×2!) = 277200 টি। অর্থাৎ শুধু স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে 277200 প্রকার ভিন্ন মিউটেশন ঘটতে পারে। এই যে মিউটেশনের মাধ্যে জিনে পরিবর্তন আসে, পরিবর্তন এসে একই জিনের নতুন প্রকরণ তৈরী করে, এই প্রতিটা প্রকরণকে বলে “অ্যালিল”, একই জিনের একাধিক অ্যালিল থাকলে সেটাকে বলা হয় “পলিমর্ফিজম”, যে জিনের এমন অসংখ্য অ্যালিল থাকে সে জিনকে বলে “পলিমর্ফিক” জিন। আর কোনো গোষ্ঠীতে কোনো জিনের অসংখ্য অ্যালিল থাকাটাই “জিনগত বৈচিত্র্যতা”।

শুধুমাত্র জিনের নিউক্লিওটাইডগুলোর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়েই 277200 টি অ্যালিল তৈরী সম্ভব। এখনও তো পয়েন্ট মিউটেশন বাকি। পয়েন্ট মিউটেশন অর্থ হলো কোনো নিউক্লিওটাইড সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া। যেমন: A এর পরিবর্তে G/C/T বসে যাওয়া। এটা বিবেচনায় আনলে উক্ত সিকোয়েন্সে মোট ১২ টি নিউক্লিওটাইড রয়েছে। অর্থাৎ ১২ টি পজিশন। প্রতিটি পজিশনে A/G/T/C এর যেকোনো একটি বসতে পারে। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে মোট সিকোয়েন্স হবে ৪ × ৪ × ৪×……× ১২ তম পদ অবদি = ১৬৭৭৭২১৬ টি। সংখ্যাগুলো দেখলেই বোঝা যাচ্ছে গাণিতিকভাবে ঠিক কি পরিমাণ সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টির। তবে বাস্তবে গোষ্ঠীতে পাওয়া অ্যালিলের সংখ্যাটা এত বড় হয়না। এর পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন: নিউক্লিওটাইডের স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন অ্যালিল তৈরীর সময় এরকম একটা নিউক্লিওটাইডের স্থানচ্যুত হওয়ার ঘটনা খুবই দুর্লভ। সাধারণত, একগুচ্ছ নিউক্লিওটাইড একসাথে নিজেদের জায়গা পরিবর্তন করে। এছাড়া, সবধরনের মিউটেশন কখনোই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেনা। মিউটেশনের পরে সংশোধন প্রক্রিয়ায় অনেক মিউটেশন অপসারিত হয় এবং স্বল্পসংখ্যক মিউটেশনই টিকে থাকে। ফলে অ্যালিল তৈরী হলেও তা শেষ পর্যন্ত নিজের অস্তিত্ব ধরে নাও রাখতে পারে। আবার কোনো কোনো অ্যালিল তার বাহককে পরিবেশের জন্য উপযুক্ত না করে বরং বাহকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, টিকে থাকার ক্ষমতা হ্রাস করে। ফলে এসব অ্যালিল কয়েক প্রজন্ম টিকে থাকলেও হয় বিলুপ্ত হয়ে যায় নতুবা দুর্লভ অ্যালিল হিসেবে থেকে যায় গোষ্ঠীর কোনো এক সদস্যের শরীরে।

যাহোক, IPD-IMGT/HLA ডেটাবেজ অনুসারে HLA-DRB1 এর অ্যালিল সংখ্যা প্রায় ৩৭০০ টি, তবে এই সংখ্যা আরও দ্রুত বাড়ছে যেহেতু নতুন নতুন অ্যালিল এখনো শনাক্ত করে চলেছি আমরা। কোনো কোনো অ্যালিল কোনো কোনো গোষ্ঠীতে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। যেমন HLA-DRB104:01 ইউরোপিয়ানদের মধ্যে, HLA-DRB104:05 পূর্ব এশিয়ান এবং HLA-DRB1*13:02 আফ্রিকানদের মধ্যে অধিকমাত্রায় রয়েছে। আবার কিছু অ্যালিল নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীতে পাওয়া যায়, সমগ্র মানবপ্রজাতিতে না। জিন বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সিসকো আয়লা গত ৯০ দশকের শুরুতে এই HLA-DRB1 নিয়ে একটা যুগান্তকারী গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তিনি মানুষের ডিএনএ তে থাকা উক্ত জিনের PBS অংশের সাথে শিম্পাঞ্জি এবং রেসাস ম্যাকাওদের শরীরে থাকা জিনের PBS অংশের তুলনা করে কিছু বিষয় লক্ষ্য করেন। প্রথমত, মানুষের শুধুমাত্র PBS অংশেই প্রায় ১০০ এর বেশি বৈচিত্র্যতা দেখা যায়। অতীতে একটি বা দুইটি মাত্র জিন থেকে পুরো মানবজাতিতে এত HLA-DRB1 এর প্রকরণ সৃষ্টি কখনোই সম্ভব নয়। অর্থাৎ একজোড়া মানুষ থেকে সমগ্র মানবজাতির উত্থান হলে এত এত DRB1 অ্যালিল খুঁজে পেতাম না আমরা। দ্বিতীয়ত, HLA-DRB1 এর কিছু অ্যালিল একইসাথে মানুষ, শিম্পাঞ্জি এবং ম্যাকাওতে পাওয়া যায়। এই তিন ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর বিবর্তনধারা আলাদা হলেও সবার মাঝে একই অ্যালিল পাওয়ার অর্থ এদের কোনো সাধারণ পূর্বপুরুষদের মধ্যে এই অ্যালিল ছিলো। শুধু ছিলোই না, প্রচুর পরিমাণে ছিলো। প্রচুর পরিমাণে থাকতেই হবে। বায়োমলিকিউলার ক্লক কিভাবে কাজ করে তা পূর্বের একটা প্রবন্ধে বিস্তারিত বুঝিয়েছিলাম। এই হিসাব অনুসারে ২.৫-৩ কোটি বছর আগে এই তিন প্রজাতির শেষ পূর্বপুরুষ পৃথিবীতে বাস করতো। যদি ঐ পূর্বপুরুষ সংখ্যায় কম হয় তাহলে অ্যালিলের সংখ্যাও কমই হবে (জনপ্রতি একটা ভিন্ন অ্যালিল প্রকরণ ধরলেও)। এখানেই বিপত্তি। কোনো জিনের কোনো অ্যালিলের সংখ্যা পপুলেশনে কম হলে সেটা বোটলনেক কিংবা ফাউন্ডার ইফেক্টের কারণে প্রজাতি থেকে একদম বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পপুলেশন জেনেটিক্সের ভাষায় এটাকে বলে, “অ্যালিল ফিক্সেশন।” অ্যালিল ফিক্সেশনের প্রধান নিয়ামকই হলো কম সদস্যের জনগোষ্ঠী (হার্ডি ওয়াইনবার্গ নীতি থেকে জেনেটিক ড্রিফট অন্য কোনো প্রবন্ধে আলাপ করবো)। আয়ালা হিসাব নিকাশ করে বলেন, কমপক্ষে ৩২ টি ভিন্ন অ্যালিলের প্রকরণ ছিলোই মানুষের পূর্বপুরুষদের মধ্যে যখন তারা শিম্পাঞ্জি থেকে আলাদা হয়েছে। এখানে একটা জিনিস বুঝতে হবে, ৩২ টি ভিন্ন প্রকরণ থাকার অর্থ কিন্তু ৩২ জন পূর্বপুরুষ নয়। যেটা কেবলই উল্লেখ করলাম, একটা অ্যালিলের প্রকরণ তখনই লক্ষ বছর ধরে টিকে থাকে যখন সেটা সংখ্যায় অনেক বেশি থাকে। এক-দুইজন সদস্যে কোনো অ্যালিল থাকলে সেটা ড্রিফটের চাপে একদম বিলুপ্তই হয়ে যায়। এবার চিন্তা করুন, কমপক্ষে ৩২ টি অ্যালিল টিকে যাওয়ার জন্য কতজন পূর্বপুরুষ হওয়া উচিত!! আয়ালার শেষ সিদ্ধান্ত এটাই ছিলো, “মানুষের বিবর্তনের ধারায় কখনো কোনো পপুলেশনের সদস্য সংখ্যা সহস্রের নিচে নামেইনি। মাত্র দুজন সদস্য থেকে আজকের এই মানবসভ্যতা আসা সম্ভবও নয়, কারণ দুইজন সদস্যে থাকে মাত্র ৪ টি অ্যালিল (প্রতিজনে দুইটা অ্যালিল)।

আয়ালার পরে এই দ্বি-মানবতত্ত্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং গবেষণাভিত্তিক সমালোচনা করেন অ্যান্ডার বার্জস্ট্রম। তিনি ৫৪ টা ভিন্ন মানবগোষ্ঠীর ৯২৯ টি জিনোম সিকোয়েন্স বের করেন। এর মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতির ক্ষেত্রে শুধু না, বরং স্যাপিয়েন্সের ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর আদি পূর্বপুরুষ সংখ্যা সম্পর্কে একটা ধারণা আসে। MSMC পদ্ধতিতে বার্জস্ট্রম নির্ধারণ করেন আফ্রিকান জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ জনপদ কমপক্ষে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ সদস্যবিশিষ্ট ছিলো। কিন্তু আফ্রিকার বাইরের যেকোনো জনপদের জন্য এই সংখ্যাটা অনেক কম। সমগ্র পৃথিবীতে মানুষের উত্থানের কারণ হিসেবে জনপ্রিয় এবং অধিক গ্রহণযোগ্য হাইপোথিসিস “আউট অব আফ্রিকা” হাইপোথিসিসের স্বপক্ষের একটা প্রমাণ। আদিম মানবের একটা ছোট সংখ্যক গোষ্ঠী আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে যে আজকে সমগ্র পৃথিবীতে রাজত্ব করছে তারই নিদর্শন এটা। এই ধরনের ঘটনাকে পুঁথিগত ভাষায় বলা হয় “বোটলনেক ইফেক্ট”। বার্জস্ট্রম একাই যে এরকম আদি পূর্বপুরুষের সংখ্যার হিসাবে ভূমিকা রেখেছেন এমন নয়। বার্জস্ট্রম ছাড়াও-

→ লি এবং ডুরবিন ২০১১ সালে PSMC পদ্ধতিতে হিসাবনিকাশ করে দেখিয়েছেন, আজ থেকে প্রায় ১-১.৫ লক্ষ বছর পূর্বে বোটলনেকের প্রভাবে আমাদের পূর্বপুরুষ ১০,০০০ জনে নেমে আসে।

→ এই একইরকম ফলাফল পেয়েছেন হার্পেন্ডিং। তিনি মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন- কোনো কারণে ১ লক্ষ বছর পূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষদের জনসংখ্যা কমে ১০ হাজারের আশেপাশে চলে এসেছিলো।

→ ২০১৪ সালে ডুরবিন আরও নিঁখুত তথ্য নিয়ে ফিরে আসেন। সিফেল এবং তিনি MSMC পদ্ধতিতে নির্ণয় করে দেখান- ২ লক্ষ বছর আগে আমাদের জনপদে জনসংখ্যা ছিলো ২০ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে। এরপর একটা বোটলনেক ঘটে এবং প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে এই আমাদের পূর্বজনপদ হয়ে যায় ১০ হাজার জন সদস্যের।

→ ঝিভোটোব্স্কি ২০০৩ সালে আমেরিকান জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিক্সে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে হিসাব নিকাশ করে দেখান, আফ্রিকা থেকে ৪৫০ জনের মতো স্যাপিয়েন্স বাইরে বের হয়েছিলো, এই ৪৫০ জনই নন-আফ্রিকান সকল মানবগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ। মনে রাখতে হবে, ৪৫০ জন থেকে সমগ্র মানবজাতি সৃষ্টি হয়েছে এমন না, বরং মানবজাতির উত্থানের পর এই ৪৫০ জন আফ্রিকার বাইরে অভিবাসিত হয়েছিলো। যদিও আরও আধুনিক গবেষণায় এই সংখ্যা আলাদা পাওয়া গেছে। ২০১৫ সালের “দি থাউজ্যান্ড জিনোম প্রজেক্ট” এর ফলাফল অনুসারে এই সংখ্যা ১৮৬১ থেকে ৩০০০ এর নিচে নয়। এমন নয় এরা একবারে আফ্রিকা থেকে বের হয়ে বাইরের দুনিয়ায় এসেছিলো। কয়েক সহস্র বছর ধরে এই অভিবাসন চলেছিলো। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ন্যাচারে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র অনুসারে আফ্রিকার বাইরে অভিবাসন শুরুর পূর্বে মানবগোষ্ঠীর সদস্য ছিলো প্রায় ৯-১২ হাজার জন।

এই যে এত হিসাব নিকাশ, একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যায়, আদি পূর্বপুরুষের সংখ্যা বিভিন্ন গবেষণায় যতই হেরফের হোক না কেনো, হাজারের নিচে কোনো গবেষণাতেই পাওয়া যায়না। গতপর্বে আমরা MVP এর সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। যারা ভুলে গেছেন তাদের আরেকবার মনে করিয়ে দিই। MVP এর পূর্ণরূপ Minimum Viable Population। এটা সেই ন্যূনতম সদস্য সংখ্যাকে বুঝায় যেটা একটা সুস্থ সবল গোষ্ঠী তথা প্রজাতির বিস্তারের জন্য প্রয়োজন। প্রজাতিভেদে এই সংখ্যা যেমন আলাদা আলাদা হতে পারে, কোনো প্রজাতির গোষ্ঠীভেদেও এই MVP আলাদা হতেই পারে। এই সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য গোষ্ঠী বা প্রজাতির বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় আনা হয়, প্রত্যেকটা বৈশিষ্ট্যই গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার হিসেবে কাজ করে। যেমন:

  • গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা। কোনো গোষ্ঠীর জিনপুলে কতজন সদস্য ভূমিকা রাখছে তাদেরকে বলা হয় “কার্যকর সদস্যসংখ্যা” (Ne), এই সংখ্যা বেশি ছোট হলে ইনব্রিডিং ডিপ্রেশন বাড়ে, গোষ্ঠীতে জিনগত রোগ শোক বাড়ে। বৈচিত্র্যতা খুব দ্রুত হ্রাস পায়। এ নিয়েই আমাদের আগের পর্ব ছিলো, তাই এই আলোচনা দীর্ঘ করব না।
  • ইনব্রিডিং সহগ। এটা নির্ধারণ করা হয় যমজ অ্যালিল পরিমাপ করে। কোনো গোষ্ঠীর সদস্যরা যদি তাদের পিতামাতা থেকে একইরকম অ্যালিল বংশধারায় লাভ করে, তাহলে বৈচিত্র্যতা কমে আসে এবং জিনগত রোগশোকের প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনাও বাড়ে। এই সম্ভাবনা নির্দেশকই ইনব্রিডিং সহগ।
  • আবাসস্থল, সম্পদের প্রাচুর্য। সাধারণত যেসকল স্থানে সম্পদের অভাব থাকেনা, নিরাপত্তা বেশি থাকে, প্রতিকুল পরিবেশ (মহামারী, অন্য প্রাণীর শিকার হওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ) কম প্রভাব ফেলে সেসকল পরিবেশে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর MVP কম হয়ে থাকে। এরা সহজে, তুলনামূলক কম বৈচিত্র্যময় জিনপুল নিয়েও পরিবেশে টিকে থাকতে পারে।
  • জন্মহার, মৃত্যুহার এবং লিঙ্গ। কোনো গোষ্ঠীতে জন্মহার যতবেশি হয় সে গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা তত দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে কম সদস্য থেকে অধিক সদস্যের গোষ্ঠী সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ, জন্মহার বেশি হলে কোনো গোষ্ঠীর MVP কমে। একইভাবে মৃত্যুহার কম হলেও MVP কমে। গোষ্ঠীতে বসবাসরত সদস্যদের মধ্যে কতজন নারী, কতজন পুরুষ, তাদের কতজন সন্তান উৎপাদনে সক্ষম, কোনো গোষ্ঠী কোন ধরনের পরিবার-ভিত্তিক সেটাও MVP নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এইসব ছাড়াও কোনো গোষ্ঠীর সদস্যদের গড় আয়ু, বাস্তুতন্ত্র প্রভৃতি বহু প্যারামিটার বিবেচনায় এনেই MVP নির্ধারণ করা হয়। MVP নির্ধারণ করা হয় “পপুলেশন ভায়াবিলিটি অ্যানালাইসিস (PVA)” পদ্ধতি দিয়ে, এই পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে সেটা আলাদা একটা প্রবন্ধ হওয়ার দাবী রাখে। এখানে সেটার আলোচনা মশা মারতে কামান দাগানো হয়ে যাবে। তবে এই PVA এরই একটা গুরুত্বপূর্ণ রুল ৫০/৫০০ রুল। এই রুল নিয়েও গতপর্বে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে।

এবার মানুষের ক্ষেত্রে এই MVP নিয়ে একটু চিন্তা করা যাক। পরিস্থিতি অনুসারে এই সংখ্যা অবশ্যই পরিবর্তনীয়। যদি চিন্তা করি আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী এক্সোপ্লানেটে গিয়ে যদি কয়েক প্রজন্ম মানুষ বসবাস করতে চায় তবে ন্যূনতম কতজন মানুষ সেখানে গিয়ে বসতি গড়তে হবে, তবে সেই সংখ্যাটা আসে ৯৮ জন। অর্থাৎ ৯৮ জন মানুষ সেখানে গিয়ে বসবাস করলে, জীবনযাপন করলে, অবাধ যৌন জননের মাধ্যমে সন্তান গ্রহণ করলে বেশ কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত যেকোনো পরিস্থিতে মানুষ সেখানে বিলুপ্ত না হয়ে টিকে থাকবে বলে আশা করা যায়। পলিনেশিয়া কিংবা আমেরিকায় যে জনগোষ্ঠী এখন রয়েছে তেমন একটা জনগোষ্ঠী পুনরায় তৈরী করতে হলে প্রায় ৭০ জন আদিপুরুষ প্রয়োজন হবে। যদি প্রকৃতি অনুকূলে থাকে, কোন বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে তবে ১০০-৫০০ জন সদস্যের একটি গোষ্ঠী থেকে টিকে থাকতে সক্ষম এরুপ সুস্থ সবল মানব প্রজাতির বিস্তার পুনরায় সম্ভব। এভাবে বিভিন্ন ধরনের শর্ত আরোপ করে বিভিন্ন ধরনের ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে যে সংখ্যাগুলো আমরা উল্লেখ করলাম সেগুলোই সবথেকে ছোট সংখ্যা। যতগুলো গবেষণার কথা আমরা আলোচনা করলাম, জানলাম সেখানে আমরা দেখেছি সর্বনিম্ন ৪৫০ জন আফ্রিকা থেকে বের হয়ে আজকের মানবসভ্যতা সৃষ্টি করেছে বলে পাওয়া গেছে। তাও পরবর্তী গবেষণায় এই সংখ্যা সংশোধিত হয়ে ১০০০+ পাওয়া গেছে। তাই সংখ্যা যতই ছোটো হোক না কেনো, সেটা কোনোভাবেই একজন আদিপিতা একজন আদিমাতা হতে মানুষ সৃষ্টি সমর্থন করেনা। কোনভাবেই মাত্র দুজন পূর্বপুরুষ হতে হাজার বছর ধরে টিকে থাকার মতো সুস্থ সবল গোষ্ঠী তৈরি হওয়াসম্ভব নয়, সেখানে মানুষের মতো এরকম বৈচিত্র্যসমৃদ্ধ প্রজাতি অনেক অনেক দূরের বিষয় বলা চলে।

মূলধারার আলোচনা এখানেই শেষ। এবার একটু সমালোচনায় আসা যাক। “ইন্টেলেকচুয়াল ডিজঅনেস্টি”-র জন্যও ইন্টেলেকচুয়াল হওয়া প্রয়োজন। এই ধরুন জনাব আতিকুর রহমান প্রথমে আয়ালার গবেষণা টেনেছেন যেখানে আয়ালা দুজন নরনারী থেকে সমগ্র মানবজাতির উত্থানের বিষয়টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এরপর তিনি টমাস বার্জস্ট্রমের ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত গবেষণা টেনেছেন যেখানে বার্জস্ট্রম নির্ণয় করে দেখিয়েছেন ৩২ টা নয় বরং ৪ টা লিনিয়েজ থেকে। অথচ অ্যান্ডার বার্জস্ট্রম, সিফেল, ডুরবিন, ঝিভোটোব্স্কি সহ বাকি জিনতত্ত্ব গবেষকদের গবেষণা পুরোপুরি এড়িয়ে চলে গেছেন নিজের কাঙ্ক্ষিত উপসংহারে পৌছাতে। এটাই আজকের দিনের মডারেট থিওলজি প্রচারকদের চক্ষুভ্রম সৃষ্টির উদাহরণ। যেকোনো দুইটা র‍্যান্ডম গবেষণা টানবো, র‍্যান্ডম একটা হেটেরোজাইগোসিটির সুত্র টানবো কোনোরূপ প্রয়োজন ছাড়া, এরপর “প্যারামিটার পরিবর্তিত হলে এই ওই হবে” বলে কনক্লুশন দিয়ে দিবো। এটুকুও বলার যোগ্যতা নেই কোন প্যারামিটারে কিরূপ পরিবর্তন হলে ফলাফলে পরিবর্তন আসতে পারে। আমরা হলফ করে বলতে পারি MVP এর ক্যালকুলেশন কীভাবে করে আতিকুর সাহেব জীবনেও চোখে দেখেননি। দেখলে বুঝতেন তার দাবী করা সকল বিষয়াদি বিবেচনায় এনেই একটা গোষ্ঠীর MVP নির্ধারণ করা হয়। আসুন, স্বঘোষিত পপুলেশন জেনেটিক্স বিষয়ক বিশেষজ্ঞের দুটি স্টেটমেন্ট নিয়ে সরাসরি আলোচনা করি।

→ আতিকুর সাহেব লিখেছেন, “ক্রিটিকদের মতে, কেবলমাত্র ২ জন মানুষ থেকে মানবজাতির উৎপত্তি হলে অতিরিক্ত ইনব্রিডিং ডিপ্রেশন এবং জেনেটিক ড্রিফট ইত্যাদির ফলে ডাইভার্সিটি এতো হ্রাস পাওয়ার কথা যে মানুষের টিকে থাকাই অসম্ভব হতো। কিন্তু আমরা উপরে দেখেছি যে Rapid population growth এসব সমস্যা কে দূর করে দেয়।”

না স্যার, দূর করেনা। একটু সাধারণ বোধ ব্যবহার করলেই বুঝতেন। আসুন হিসাব শিখাই। ধরুন, আপনি একজন নারীকে বিবাহ করলেন যার সাথে আপনার কোনোপ্রকারের রক্তের সম্পর্ক নাই এবং ১০০ জন সন্তান গ্রহণ করলেন (যদিও এটা সম্ভব নয়, তবু বিশেষ কারণে ধরে নিলাম)। আপনার সন্তানেরা এবং তাদের সন্তান-সন্ততিরা যদি বংশ পরম্পরায় শুধুমাত্র নিজ পরিবারের ভিতরেই যৌন মিলন ঘটায় এবং বংশবৃদ্ধি করে অর্থাৎ পরিবারের সদস্যদের বাইরে অন্য কাউকে বিবাহ না করে কখনো তবে সেক্ষেত্রে ২০০ বছর পরে আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে ঠিক কি ঘটতে পারে বলে মনে হয়? ভাবুন, খুঁজুন। ২০০ বছরে সর্বোচ্চ আপনার পরিবার আট প্রজন্ম অব্দি হতে পারে। যদি কেউ এই ২০০ বছরে মৃত্যুবরণ না করে এবং নিজের জীবনকালে ৪০ বছর যাবৎ সন্তান গ্রহণে সক্ষম থাকে তবে আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা হবে প্রায় ৩০০০০ জন। এটা কিন্তু আপনার বলা সেই র‍্যাপিড পপুলেশন গ্রোথ, মানুষের ক্ষেত্রে। যেহেতু এখানে অজাচার ব্যতীত আর কোনো উপায়ে সন্তান গ্রহণ করা হয়নি, সেহেতু বংশ পরম্পরায় ইনব্রিডিংজনিত রোগের সম্ভাবনা কমবে তো না বরং আরো বাড়তেই থাকবে। দুইজন ভাই-বোন বিবাহ করলে তাদের সন্তানে ২৫% সম্ভাবনা থাকে কোনো না কোনো জেনেটিক ত্রুটি আসার, জেনেটিক রোগ হওয়ার (হোমোজাইগোসিটি)। এক্ষেত্রে একই সাথে একাধিক রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। বিষয় হলো, কোনো সন্তানের যদি জেনেটিক রোগ নাও থাকে তাও খুশি হওয়ার কিছু নেই, এই রোগের জন্য দায়ী অ্যালিল ঠিকই তার শরীরে প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থেকে যাবে এবং পরবর্তী প্রজন্মে জেনেটিক রোগ সৃষ্টির জন্য বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ সে এখানে নিজের পরিবারেরই কাউকেই আবার বিয়ে করছে যার মধ্যেও একই অ্যালিল বিদ্যমান থাকতে পারে। এভাবে চললে ২০০ বছর পরে আপনার পরিবারের যেকোনো সদস্যের জেনেটিক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা যেকোনো সাধারণ মানুষের থেকে ১০% অবদি বেশি। অর্থাৎ ৩০ হাজার সদস্যের ৩ হাজার জন রোগে আক্রান্ত, বিকলাঙ্গ। এর পাশাপাশি রয়েছে শিশুমৃত্যু হারের প্রকোপ। আপনি যেহেতু পপুলেশন জেনেটিক্স নিয়ে জ্ঞান রাখেন, এটুকু একটু নিজে হিসাব করে ফেলুন দেখি।

→ আতিকুর সাহেব আরও লিখেছেন, “Ne হচ্ছে ক্রমবর্ধমান সময়ের গড় পপুলেশন সাইজ। এটি কখনোই তাৎক্ষণিক একক সময়ের পপুলেশন সাইজ নির্ধারণ করতে পারেনা যার ফলে বটলনেক ইফেক্টের মাধ্যমে ২ জন মানুষের থেকে আমাদের উৎপত্তি হলেও এতো শার্প একটি বটলনেক কে Ne কখনোই ডিটেক্ট করতে পারবেনা। Ne একটি কনস্ট্যান্ট সাইজ অনুমান করে নেয়, যা অতীতে ঘটা র‍্যাপিড বটলনেক এর জন্য যথেষ্ট নয়।”

এই স্টেটমেন্ট পড়ার পড়ে আমি এতটুকু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, জেনেটিক্স আর বিবর্তন নিয়ে বিশেষজ্ঞ এই বক্তা জীবনে একটা পপুলেশন জেনেটিক্সের টেক্সটবই পড়েননি। আতিকুর সাহেব, Ne সময়ের সাথে গড় পপুলেশন সাইজ যে বললেন, এই গড় সেই গড় না যেটা আপনি ভাবছেন। Ne বলতে কোনো পপুলেশনের এমন একটা সদস্য সংখ্যা বুঝায় যেটা পপুলেশনের বর্তমান সদস্যসংখ্যা থেকে কম, কিন্তু এই সদস্যদের মধ্যে জেনেটিক ড্রিফট বর্তমান সদস্যদের মধ্যে হওয়া জেনেটিক ড্রিফটের সমান। যাহেক, Ne কে যে গড় সদস্যসংখ্যা বললেন, এটা কোনো গাণিতিক গড় না, বরং হারমোনিক গড় যেটা ডেটা সায়েন্সের একটা টুল। এই টুল ব্যবহারের বিশেষ কারণই হচ্ছে পপুলেশন বোটলনেক শনাক্ত করা। বোটলনেকের ফলে বিবর্তনের কোনো পর্যায়ে যদি মাত্র দুইজন সদস্য হতো গোষ্ঠীতে থাকতো তাহলে সেটা অবশ্যই বোঝা যেতো। AI এর যুগে আপনি এমন মুর্খের মতো কথা বললে সেটা কেউ ধরতে পারবেনা ভেবে নিলেন?

অনেক আলোচনা হলো। এবারের মতো উপসংহারে আসা যাক। পপুলেশন বোটলনেক বৈচিত্র্যতা কমায়, বোটলনেকের ফলে হুট করে কোনো গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা অনেক কমে যায়। ফলে অনেক অ্যালিল বিলুপ্ত হয়ে যায় আবার অনেক অ্যালিলের পরিমাণ গোষ্ঠীতে বেড়ে যায়। মানুষে এই বোটলনেক আগেও ঘটেছে, সেগুলোর পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণও রয়েছে। কোনো পপুলেশনের কার্যকর সদস্য সংখ্যা (Ne) এই বোটলনেক শনাক্তকরণের অন্যতম টুল। কোনো পপুলেশনের সদস্য সংখ্যা কখনো দুইজনে নেমে আসলে সেটা জেনেটিক বৈচিত্র্য এমন উথাল পাথাল পরিবর্তন নিয়ে আসবে যেটা Ne তে প্রভাব ফেলবে। মানুষের উৎপত্তির পর বোটলনেকের ফলে কখনো দুজন সদস্য হয়ে থাকলেও তারা কিন্তু ঠিক সেই গল্পের প্রথম পুরুষ আর নারী হতে পারবেনা, কারণ তাদের আগেই মানবপ্রজাতির আবির্ভাব ঘটেছে এবং তারা সেই মানবপ্রজাতির দুজন সদস্যমাত্র। যদি ধরেও নেই মানুষের উৎপত্তি সম্পূর্ণ দুই বিপরীত লিঙ্গের সদস্য থেকে হয়েছে, তবুও একটা ক্যাচাল থেকেই যায়। আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে MHC জিনগুলো (major histocompatibility complex) যার ভিতরে আলোচ্য HLA ও অন্তর্ভুক্ত। এই MHC জিনগুলোর মধ্যে HLA-A, HLA-B, HLA-C এর অনেকগুলো অ্যালিল রয়েছে যেগুলোর উৎপত্তি হোমো গণের উৎপত্তির আগেই, প্রায় ৫০-৭০ লক্ষ বছরের পুরাতন। আবার HLA-DRB1, HLA-DQA1, HLA-DQB1 এর কিছু অ্যালিল কোটিবছরও পুরাতন। এছাড়াও KIR এবং CYP গ্রুপের কিছু জিনের অ্যালিল, রক্তগ্রুপ নির্ধারণের কিছু অ্যালিল বেশ পুরাতন, মানুষ-শিম্পাঞ্জি বিভাজনেরও আগের। সব মিলে কম করে অর্ধশত জিন পাওয়া যাবে যাদের অ্যালিল বহু পুরাতন, মানুষের উৎপত্তিরও বহু আগের। মাত্র দুজন থেকে সমগ্র মানবজাতির উৎপত্তি এই ঘটনাকে ব্যাখা করতে পারেনা। কখনোই না।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *