অ্যাপোফেনিয়া: গোস্তে আল্লাহর নাম

অ্যাপোফেনিয়া: গোস্তে আল্লাহর নাম

অ্যাপোফেনিয়া। এ এমন এক ধরণের প্রবণতা যার ফলে কোনো ব্যক্তি সম্পূর্ণ অসংগত বস্তু, অসাদৃশ্যপূর্ণ তথ্যের মধ্যেও অর্থবহ সংযোগ খুঁজে বের করে এবং সেটাকেই সত্য মনে করে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে উপস্থাপন করে থাকে। এই অ্যাপোফেনিয়ারই একটি বিশেষ রূপ হলো প্যারেডোলিয়া


i) আমাদের মস্তিষ্কে চেহারা শনাক্তকরণের জন্য বিশেষ অঞ্চল রয়েছে। এই অঞ্চলের নাম FFA (Fusiform Face Area)। কোনো কিছু যখন আমাদের সামনে আসে এবং সেটা যদি কোনো কিছুর অবয়ব হয় কিংবা অবয়ব সদৃশ হয় তবে তা এই FFA তে উদ্দীপনা জোগায়। এবং FFA সক্রিয় হয়ে গেলে আমরা সেটাকে চেহারা হিসেবে শনাক্ত করি।


ii) এই যে মাঝেমাঝে আলু, টমেটো কিংবা গরুর গোস্তে আল্লাহর নাম আরবিতে লেখা দেখতে পাওয়া কিংবা মেঘের মধ্যে শিব বা কোনো পূজনীয় সত্ত্বার অবয়ব দেখতে পাওয়া এ সবই ঘটে FFA সক্রিয় হওয়ার ফলে। ২০০৯ এবং ২০১১ এর দুইটা স্টাডিই এই বিষয়টাকে প্রমাণ করেছে। ২০০৯ সালের গবেষণাটা হয়েছিলো ম্যাগনেটোসেফালোগ্রাফি এবং ইলেক্ট্রোসেফালোগ্রাফির সহায়তায়। এই গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছিলো ১২৩ টি উপাদান। যার ৪০ টি ছিলো মানুষের চেহারা, ৪১ টি ছিলো এমন বস্তু যার মধ্যে চেহারার একটা অবয়ব আছে, ৪২ টি ছিলো র‍্যান্ডম বস্তু। পরীক্ষণ শেষে প্রাপ্ত তথ্য হতে দেখা যায়, চেহারা শনাক্তকরণের সময় FFA খুব দ্রুত সক্রিয় হচ্ছে, সক্রিয় হতে সময় নিচ্ছে 120-130 মিলিসেকেন্ড। অন্যদিকে, যে বস্তুগুলোর ভিতর একটা চেহারার অবয়ব ছিলো সেগুলো একটু দেরীতে হলেও মানুষের FFA অংশকে সক্রিয় করছে এবং সেগুলোর মধ্যে চেহারা খুঁজে পাচ্ছে ভলান্টিয়াররা; এইসময় FFA সক্রিয় হতে সময় নিচ্ছে 160-165 মিলিসেকেন্ড। এই যে পরিচিত কোনোকিছুর সদৃশ অন্য কোনো নকশার ভিতর ওই পরিচিত বস্তুটাকে দেখতে পাওয়া, এর পিছনে দায়ী আমাদের ব্রেন।

গরুর গোস্তে আল্লাহর নাম।


iii) ২০২২ সালে আরেকটি গবেষণা হয়। এই গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হয় EEG। এই গবেষণায় আরও বেশি কিছু জানা যায়। যখনই কোনো চেহারা বা চেহারাসদৃশ নকশা আমরা দেখি, আমাদের ফ্রন্টাল এবং অক্সিপিটোটেম্পোরাল কর্টেক্সে সাড়া জাগে। যেটা অন্যান্য সাধারণ বস্তুর ক্ষেত্রে জাগেনা। কোনোরকম চিন্তা ভাবনা না করে অবচেতন মনে এই যে সাড়া জাগা এটা প্রাকৃতিক নির্বাচনে খুবই সহায়ক একটা জিনিস। এর মাধ্যমে কাউকে দেখেই তার মানসিক অবস্থা বোঝা যায় এবং সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যেমন: সে অনেক রাগী কিংবা আক্রমণাত্মক ভঙ্গীতে থাকলে নিজেকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া যায়, পলায়ন করা যায়।


iv) বোঝা গেলো? প্যারিডোলিয়া আমাদের মস্তিষ্কের কারণে সৃষ্ট এক প্রকার ভ্রম মাত্র। গরুর মাংস কিংবা টমেটোতে আল্লাহ খুঁজে পাওয়া কিংবা মেঘে দেবতার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া অলৌকিক কিংবা কারোও কুদরত নয়। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া অধিকাংশ প্যারিেডোলিয়ার ছবি এডিট করা হয়ে থাকে।


v) “মাছের মুখে আল্লাহর শব্দ”- শিরোনামে ২০২২ এ ভাইরাল হওয়া নিউজও এক ধরনের অ্যাপোফেনিয়া। যেখানে কোনো র‍্যান্ডম আওয়াজের ভিতর আমরা কোনো বিশেষ শব্দ বা শব্দাংশ শুনতে পাই। এই শ্রবণ সম্পর্কিত অ্যাপোফেনিয়া যখন প্যারেডোলিয়ার সাথে মিলে যায় তখন মনে বাতাসে নড়ন্ত কলাগাছও রাতের জ্যোৎস্নায় আমাদের কাছে ভূত বলে প্রতিপন্ন হয়। তাই সাহসী হন। এসব দেখে ভয় না পেয়ে ভূতের কাছাকাছি গিয়ে দেখুন আসলেই সেটা ভূত না কচু!


যাহোক, এরপর কেউ পোড়া রুটিতে ঈশ্বর, গরুর গোস্তে আল্লাহ আর চাঁদে সাঈদিকে খুঁজে পেলে তাকে আমাদের এই প্রবন্ধটি পড়তে দিন। সবাইকে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস থেকে বের করে আনুন। সাথে থাকুন তিকতালিকের।

তথ্যসূত্রঃ

১.2009 সালের গবেষণাপত্র: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2713437/

২.2011 এর গবেষণাপত্র: https://academic.oup.com/cercor/article/22/10/2354/289001?login=false

৩.2022 এর গবেষণাপত্র: https://academic.oup.com/cercor/article/32/1/137/6329814?login=false

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *