ডাইনোসরের লম্বা চুল
ঘটনা ০১: আজ থেকে বছর তিনেক আগে (২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি কৌতুহলোদ্দীপক প্রবন্ধ সামনে আসে, বাংলাদেশের জনপ্রিয় বিজ্ঞানবিরোধী লেখক রাফান আহমেদ সাহেবের “ডারউইনবাদ ভুল হলে কী জীববিজ্ঞান পুরোটাই ভুল হবে?” শীর্ষক প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধে কয়েকটি বিষয়ের উপর জোরালোভাবে আলোকপাত করেছেন তিনি। প্রথমে তিনি বলেছেন হিস্টোরিকাল সাইন্স এবং অপারেশনাল সাইন্স কী ও তাদের পার্থক্য। তারপরের অংশে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন ডারউইনবাদ যেহেতু এক ধরনের হিস্টোরিকাল সাইন্স, সেহেতু এটা কখনো ভুল প্রমাণিত হলে জীববিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার উপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না। পুরো প্রবন্ধ জুড়ে সাইন্সের উল্লিখিত দুই ভাগের বিভিন্ন পার্থক্য দেখানো হয়েছে। সব তথ্য সঠিকভাবেই সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পুরো লেখাটা পড়ে যখন শেষ করলাম তখন কিছু জিনিস নজরে আসলো। প্রথমত, লেখক তার প্রবন্ধ হিস্টোরিকাল সাইন্স বনাম অপারেশনাল সাইন্স দিয়ে শুরু করেছেন; আবার সেই হিস্টোরিকাল সাইন্স বনাম অপারেশনাল সাইন্স দিয়েই শেষ নামিয়েছেন। কারোও পুর্বজ্ঞান না থাকলে মনে হতে পারে- হিস্টোরিকাল সাইন্স মানেই বানোয়াট, পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের মনগড়া গল্প যার কোনো ভিত্তি নেই, যার পিছনে কোনো যুক্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে, বিজ্ঞানের এই দুই শাখা একে অপরের সাথে যে কতখানি ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা যেন এসব লেখকদের চোখ এড়িয়ে যায়। নতুবা, ইচ্ছাকৃতভাবেই উপেক্ষা করে যান নিজের প্রবন্ধের শিরোনামকে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য, একদল মানুষকে বোকা বানিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য।
ঘটনা ০২: কয়েকদিন আগে আমাদের “হারিয়ে যাওয়া হোমিনিনদের গল্প” শীর্ষক শিরোনামে একজন ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, “যেহেতু চুল নষ্ট হয়ে যায় এবং ফসিলাইজড হয় না সেহেতু আমরা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি ডাইনোসরের লম্বা লম্বা চুল ছিলো না? ঠিক আমাদের রূপসী নারীদের মতো লম্বা চুল!” প্রশ্নটা যথেষ্ট চিন্তার। আসলেই তো! আমরা যখন ডাইনোসরকে কল্পনা করি কিংবা চলচ্চিত্রে ডাইনোসর দেখি, তাদের মাথায় কিন্তু লম্বা লম্বা স্টাইল করা চুল আমরা দেখিনা। কিন্তু কেনো? আমরা কিভাবে নিশ্চিত হলাম তাদের চুল নেই?
চলুন, এবার আসল আলোচনায় ডুব দেওয়া যাক। ধরে নিই, আপনি একদিন আপনার শিক্ষককে একটি প্রশ্ন করলেন, “চোখ মস্তিষ্কে যে ভিজ্যুয়াল ইনফরমেশন প্রদান করতে সক্ষম, এর পিছনে আসলে কারণ কী?” আপনার শিক্ষক চাইলে এখন আপনাকে দুই ধরনের ব্যাখা দিতে পারেন। প্রথমে খুব সাধারণ একটা ব্যাখা- চোখের গঠন এবং কলাকৌশল নিয়ে। এই ধরনের ব্যাখায় উল্লেখ থাকবে কীভাবে স্নায়ু দ্বারা চোখ আমাদের মস্তিষ্কের সাথে সম্পর্কিত, লেন্সের ভিতর দিয়ে আলো প্রবেশের পর কীভাবে তা রেটিনাকে উত্তেজিত করে তোলে, কীভাবে তড়িৎসংবেদী কোষ এই আলো তড়িৎ সংকেতে রুপান্তরের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রেরণ করে এবং কীভাবে চোখের রড-কোণ কোষ কাজ করে প্রভৃতি। দ্বিতীয় ব্যাখাটি মিলিয়ন বছর ধরে কীভাবে চোখের বিবর্তন ঘটেছে তা নিয়ে, চোখের ক্রমাগত বিবর্তন কীভাবে আমাদের পূর্বপুরুষদের টিকে থাকতে সহায়তা করেছে এবং সবশেষে চোখ এমন জটিল গঠন ও কলাকৌশল লাভ করেছে। এই দুই ধরনের ব্যাখা একে অপরের সাথে কোনোদিক থেকেই সাংঘর্ষিক? না, সাংঘর্ষিক না বরং এরা একে অপরের পরিপূরক।
এখানে প্রথম ধরনের ব্যাখাকে বলা হয় প্রক্সিমেট এক্সপ্লানেশন বা প্রত্যক্ষ ব্যাখা। এই ধরনের ব্যাখায় উল্লেখিত কারণগুলো প্রত্যক্ষ কারণ যা সরাসরি পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষণের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় এবং প্রত্যক্ষ কারণ খুঁজে বের করাকে বলা হয় প্রত্যক্ষ করণ (Proximate causation)। দ্বিতীয় ধরনের ব্যাখায় রয়েছে চোখের উৎপত্তি, পরিবর্তন, অভিযোজন এবং এর টিকে যাওয়ার ইতিহাস। এই ইতিহাসের সাথে সাথে আমরা জানতে পারবো কেনো চোখ এত জটিল, কেনো কিছু প্রাণীর চোখে রয়েছে তুলনামুলক অধিক সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্য, কেনো কিছু চোখ সক্ষম হয়েছে রঙিন ছবি দেখতে কিন্তু কিছু চোখ হয়নি, কেনো কিছু চোখের সামনে পর্দার মতো আস্তরণ থাকে সুরক্ষার জন্য। এই ধরনের “কেনো” প্রশ্নের ব্যাখাকে বলা হয় আল্টিমেট এক্সপ্লানেশন বা চূড়ান্ত ব্যাখা। এখানে উল্লেখিত কারণগুলো চূড়ান্ত কারণ এবং এই চূড়ান্ত কারণ খুঁজে বের করার প্রক্রিয়াটাই চূড়ান্ত করণ (Ultimate causation)।
প্রত্যক্ষ করণ আমাদের কাছে কোনো ঘটনার এমন ব্যাখা প্রদান করে যেটা আপনি খালি চোখে দেখতে পারবেন, বুঝতে পারবেন কিংবা উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণ করে গবেষণাগারে বসে খুঁজে খুঁজে বের করতে পারবেন। যেমনটা দেখলাম চোখের কার্যপদ্ধতি ব্যাখার ক্ষেত্রে, প্রত্যক্ষ করণ প্রতিটা অংশ কীভাবে কাজ করে তার চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। কিন্তু এটি সার্বজনীন কিছু নয়। বিভিন্ন প্রাণিতে চোখের গঠন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, চোখের গঠন ভিন্ন হওয়ার সাথে সাথে প্রত্যক্ষ কারণও পরিবর্তিত হতে থাকে। যেমন কিছু সামুদ্রিক প্রাণীর চোখে একাধিক লেন্স রয়েছে, আবার মাছির চোখ হলো পুঞ্জাক্ষী। এদের ক্ষেত্রে চোখের ভিজুয়াল ইনফরমেশন মস্তিষ্কে পাঠানোর প্রক্রিয়া এবং মানুষের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া এক নয়। অর্থাৎ চোখের গঠন ভেদে প্রত্যক্ষ কারণ পরিবর্তিত হচ্ছে। অন্যদিকে চূড়ান্ত চূড়ান্ত করণ তুলে ধরে সেই ইতিহাস যার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কারণগুলো প্রকৃতিতে স্থায়ী হয়েছে। সহজ ভাষায় বললে, কোনো ঘটনার পিছনে কেনো নির্দিষ্ট কিছু প্রত্যক্ষ কারণ দায়ী তা ব্যাখা করে আল্টিমেট কজেশন বা চূড়ান্ত করণ।
যেকোনো ঘটনার পিছনে দায়ী চূড়ান্ত কারণগুলো নির্ণয় করা খুবই জরুরী। আমরা হর-হামেশাই শুনে থাকি বিজ্ঞান শুধু কীভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে, কেনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনা। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, কোনো বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে “কীভাবে” প্রশ্নের উত্তর যদি হয় প্রক্সিমেট এক্সপ্লানেশন তবে “কেনো” প্রশ্নের উত্তর হিসেবে বিবেচনা করা যায় আল্টিমেট এক্সপ্লানেশনকে। যেকোনো ঘটনার প্রক্সিমেট ব্যাখা “কেনো” অস্তিত্বশীল তার উত্তরই ঐ ঘটনার আল্টিমেট এক্সপ্লানেশন। এই আল্টিমেট এক্সপ্লানেশন জানতে আমাদের দ্বারস্থ হতে হয় হিস্টোরিকাল সাইন্সের যেখানে প্রক্সিমেট কারণগুলো অপারেশনাল সাইন্স থেকেই জানা যায়।
যেকোনো আচরণ, মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য যেমন জাতিবিদ্বেষমূলক আচরণ, অতিরিক্ত রাগ, সামাজিক কর্মকাণ্ডে উদাসীনতা, ইন্ট্রোভার্ট হওয়া, ইভটিজিং করা, ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা প্রভৃতির পিছনে কারণ খুঁজতে আমরা দৈনন্দিন জীবনে কিছু সাধারণ ব্যাখার ব্যবহার করে থাকি। এই ব্যাখাগুলো এমন হয়ে থাকে-
→ সে কোনো একটা জাতিকে ঘৃণা করে।
→ সে ডমিন্যান্ট থাকতে চায়।
→ সে শিশু বয়সে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
→ তার শরীরে হরমোনের ভারসম্যহীনতা রয়েছে।
→ নিজের অক্ষমতাকে চাপা দিতে চায়।
→ ভায়োলেন্ট পর্নোগ্রাফির প্রতি আকর্ষণ রয়েছে।
→ তীব্র যৌন উত্তেজনা কাজ করে।
→ পিতা-মাতাকে ঘৃণা করে।
→ শিশু বয়সে পরিবারের সঠিক যত্ন পায়নি।
→ কোনো বিশেষ জিনের প্রভাব রয়েছে যা নিষ্ঠুরতা কিংবা সামাজিক উদাসীনতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
উপরের ব্যাখাগুলো ছাড়া আরও নানা ধরনের ব্যাখা আমরা নিয়মিত ব্যবহার করি যেগুলো একাধারে আশেপাশের পরিবেশ, সংস্কৃতি, জীবনের অতীত অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, কিংবা মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের গঠন, হরমোনের নিয়ন্ত্রণ, জেনেটিক এক্সপ্লানেশনও হতে পারে। এই সব ধরনের ব্যাখাই প্রক্সিমেট। এগুলো শুধু একজন বিশেষ ব্যক্তির (ক্রিমিনাল/ভিক্টিম/সাধারণ কোনো মানুষ) কোনো নির্দিষ্ট আচরণের পিছনের কারণ তুলে ধরছে। কিন্তু ওই নির্দিষ্ট কারণগুলো কীভাবে প্রকৃতিতে এসেছে, কেনো স্থায়ী হয়েছে এবং আমাদের মধ্যে কেনো দেখা যাচ্ছে তা বুঝতে হলে আল্টিমেট কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে, জানতে হবে এদের ক্রমবিকাশের ইতিহাস।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে তাদের কাজ করার পদ্ধতি, গবেষণা পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। যেহেতু আলাদা আলাদা ক্ষেত্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে, সেহেতু যেকোনো দুই ক্ষেত্রের মধ্যে কিছু না কিছু পার্থক্য অবশ্যই থাকবে। কিন্তু তাই বলে তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকবেনা, একে অপরের সাংঘর্ষিক হবে কিংবা একে অপরের তথ্যের উপর নির্ভরশীল হবেনা এমন কিন্তু মোটেই নয়। অবশ্যই বিজ্ঞানের এক ক্ষেত্রের সাথে আরেক ক্ষেত্রের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, এক ক্ষেত্রের প্রভাব আরেক ক্ষেত্রে স্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু যখন কেউ কোথাও ন্যাচারাল সাইন্স বনাম সোশ্যাল সাইন্স, ফিজিক্যাল সাইন্স বনাম লাইফ সাইন্স শিরোনামে আলোচনা শুরু করেন, তখন শুধু তাদের পার্থক্যগুলোই মোটা দাগে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করার প্রবণতা দেখান তারা, এসব ক্ষেত্রের মধ্যকার সম্পর্কগুলো বিবেচনায় আনতে বেমালুম ভুলে যান, ফলে তাদের এত এত যুক্তির শেষে যে সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসে সেটাও হয় পক্ষপাতদুষ্ট, মিসলিডিং। হয়তো অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করে থাকেন নিজের আর্গুমেন্টকে টিকিয়ে রাখার জন্য, আবার হয়তো অনেকে উদাসীন থাকেন নিজের যুক্তির সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে। প্রথম ঘটনায় এটাই আমরা দেখেছি, একজন লেখক নিজের পছন্দমতো আর্গুমেন্ট সাজিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করেছিলেন এভাবেই।
এবার আসি আসল কথায়। বিজ্ঞানকে আমরা এর কাজ করার ধরণের উপর ভিত্তি করে দুইটা ভাগে ভাগ করতে পারি।
১) অপারেশনাল/ফাংশনাল/এক্সপেরিমেন্টাল সাইন্স: এটা হলো গবেষণামূলক বিজ্ঞান। আপনি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন, হাতেকলমে প্রয়োগ করতে পারবেন, পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালাতে পারবেন। বলা চলে, এই বিজ্ঞান বর্তমানকে পর্যবেক্ষণ করে, বর্তমানকে নিয়ে ময়নাতদন্ত চালায়। কোথাও কোথাও এর নাম অভজার্ভেশনাল সাইন্স কিংবা এক্সপেরিমেন্টাল সাইন্স লেখা পেতে পারেন। সবগুলো টার্মের অর্থ একই।
২) হিস্টোরিকাল সাইন্স: অতীতকে জানার বিজ্ঞান। আমরা বর্তমানে কোনো কিছু পর্যবেক্ষণ করার পর তার উৎপত্তি বা তার পিছনের কারণ জানতে আগ্রহী হয়ে উঠি। কিন্তু আমাদের পক্ষে কী অতীতে গিয়ে নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করে আসা সম্ভব? উত্তরটা হলো, না। হিস্টোরিকাল সাইন্স কোনো কিছুর অতীত রহস্য উদঘাটন করে আমাদের জ্ঞানতৃষ্ঞা মিটায়।
উপরের সংজ্ঞা থেকে হিস্টোরিকাল সাইন্স এবং অপারেশনাল সাইন্সের পার্থক্য স্পষ্ট। অপারেশনাল সাইন্সের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এটা সরাসরি আমাদের কোনো কিছু পর্যবেক্ষণ বা সেটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষার সুযোগ করে দেয়। উদাহরণস্বরুপ, ‘মাই টিচার অক্টোপাস’ নামে একটা ডকুমেন্টারি রয়েছে। এই ডকুমেন্টারিতে আমরা দেখতে পাই অক্টোপাস কীভাবে শিকারীকে পরাজিত করে, আমরা দেখতে পাই অক্টোপাস কীভাবে সহজে একজন মানুষকে বিশ্বাস করে নিতে পারে, আমরা দেখতে পাই একটা অক্টোপাস শিকারদের ধাওয়া না করে কোনো এক সকালে তাদের সাথে খেলা করছিলো মনের আনন্দে। অক্টোপাসের এসব বৈশিষ্ট্য আমরা সরাসরি পর্যবেক্ষণ থেকে জানতে পেরেছি। সোডিয়ামের সাথে পানি মিশালে ঠিক কিরকম বিক্রিয়া হবে, তাতে তাপ উৎপন্ন হবে নাকি তাপ শোষণ হবে, প্রভাবকের পরিবর্তনে বিক্রিয়ায় কীরুপ পরিবর্তন আসতে পারে এসবও আমরা সরাসরি ল্যাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারি। একটা ব্যাক্টেরিওফাজ ভাইরাস কীভাবে বংশবিস্তার করে সেটাও আমরা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারি। এসবই অপারেশনাল সাইন্সের অন্তর্ভুক্ত। আবার, অপারেশনাল সাইন্স কোনো ধারণাকে সরাসরি পরীক্ষা করেও দেখতে পারে। একটা ঘটনার জন্য পূর্বের কোনো ঘটনাকে দায়ী মনে হলে আমরা সেই ঘটনার রিপিট ঘটিয়ে পরীক্ষা করে দেখে নিতে পারব আসলেই ফলাফল দেখে করা অনুমান সঠিক কিনা।
হিস্টোরিকাল সাইন্স ফাংশনাল সাইন্স থেকে অনেকটা আলাদা। হিস্টোরিকাল সাইন্স কাজ করে প্রমাণাদির সাপেক্ষে যুক্তিপ্রয়োগ করে। অতীত নিয়ে এই যুক্তিপ্রয়োগ/রিজনিং এর একটা উদাহরণ প্রথমে দেখে নেওয়া যাক। ধরুন, আপনি এবং আপনার স্ত্রী প্রিয়া একটি বাগানঘেরা বাড়িতে থাকেন। আপনাদের সাথে আর কেউ থাকেনা বাড়িতে। তো একদিন আপনি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি এসে দেখলেন ঘরের দরজা খোলা। কিন্তু এরকম হুট করে দরজা তো খোলা থাকেনা, বন্ধই থাকে। আর প্রিয়ার তো এত তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফেরার কথা না। এই ঘটনার পিছনে কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আপনার মাথায় কয়েকটি সম্ভাবনা আসলো-
→ প্রিয়া ঘরের ভিতরেই আছে, সে হয়তো দরজার ছিটকিনি ভিতর থেকে আটকাতে ভুলে গেছে।
→ প্রিয়া এখনো ফেরেই নি, চোর দরজার তালা ভেঙে চুরি করে নিয়ে গেছে।
→ কোনোভাবে হয়তো সকালে অফিসে যাওয়ার সময় তালা লাগাতে ভুলে গেছেন।
এক্ষেত্রে প্রমাণ সংগ্রহের পূর্বে প্রতিটা ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা সমান সমান ধরে নিলাম। এবার আপনি উপরের ঘটনাগুলোর সাথে আপনার হাতে থাকা তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে তাদের সম্ভাবনা যাচাই করতে থাকলেন।
- চোর তালা ভেঙে নিয়ে গেলে ভাঙা তালা পেতেন, কিন্তু আপনি এসে দেখছেন তালা অক্ষত, খোলা অবস্থায় আছে। আর এই নতুন, মজবুত তালা আপনি আজকে সকালেই ব্যবহার শুরু করেছেন, ফলে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে তালা খুলতে পারার সম্ভাবনা একেবারেই কম। ফলে চোর এসে আপনার ঘরের দরজার তালা খুলেছে এর সম্ভাবনা অনেকখানি কমে গেলো (একদম শূণ্য হয়নি এখনো) বাকী দুইটা ঘটনার তুলনায়। আপনি এবার ঘরের ভিতরে ঢুকলেন, ঢুকে দেখলেন সব জিনিসপত্র অক্ষত অবস্থাতেই আছে, কিছুই চুরি হয়নি। এর অর্থ চোর আসার সম্ভাবনা এখন একেবারেই শূণ্য।
- আপনি এবার জোরে প্রিয়া, প্রিয়া চিৎকার করলেন, কিন্তু কেউ ডাক শুনলো না। তখন আপনি আপনার স্ত্রীর নম্বরে ফোন দিলেন, দেখলেন আপনার স্ত্রীর মোবাইল ফোন বাজছে, রিংটোনের আওয়াজ ড্রয়িং রুম থেকে আসছে। এসে একটু খুঁজে দেখার পর মোবাইল ফোন সোফার উপর পড়ে থাকতে আবিষ্কার করলেন। এবার আপনি নিশ্চিত হলেন প্রিয়া তাহলে বাসায় ফিরেছে এবং সে-ই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেছে। তাহলে তিন নম্বর ঘটনা অর্থাৎ অফিস যাওয়ার সময় তালা না লাগিয়ে যাওয়া- সেটার সম্ভাবনা আপনাআপনি কমে শূণ্যের কাছাকাছি চলে গেলে।
তো রিজনিং শুরু হয়েছিলো বর্তমানে পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া একটা তথ্যের অতীত উৎস সন্ধানে। পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আপনি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছে যেতে পেরেছেন। শুরুটা হয়েছিলো তিনটা পৃথক পৃথক ব্যাখা এবং তাদের সমান সমান সম্ভাবনা দিয়ে, তখন হাতে তথ্য ছিলো কম, ঐ তথ্য আবার সবগুলো ব্যাখাকেই সমানভাবে সায় দিচ্ছিলো, আস্তে আস্তে আপনার সংগ্রহ করা তথ্য বাড়তে থাকলো, অন্যান্য ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কমতে থাকলো এবং একটা ঘটনা ঘটার চান্স বাড়তে থাকলো, শেষমেশ এত পরিমাণ তথ্য পেয়েই গেলেন যা একটা মাত্র ব্যাখার সাথেই সঠিকভাবে খাপ খায়।
আমরা এই উদাহরণটা ব্যবহার করেছি কীভাবে রিজনিং করতে হয় তার একটা খুব সাধারণ ধারণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। অবশ্যই এই ধরনের থট এক্সপেরিমেন্টে আরও বেশি ক্রাইটেরিয়া এনে, আরও বেশি সম্ভাবনা তুলে ধরে জটিল গোলকধাঁধা বানানো সম্ভব, এমন গোলকধাঁধা যার সমাধান হবেনা, কিন্তু কল্পনায় অনেক কিছু সম্ভব হলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণা কোনোদিক থেকে কল্পনা না। ফলে বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বন করে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো যুক্তির মাপকাঠিতে সাজাতে থাকলে সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে আস্তে আস্তে অগ্রসর হতে থাকেন গবেষকরা, বাকী সম্ভাব্য ব্যাখাগুলো বাতিল হতে থাকে। অনেকটা “Process of elimination” এর মতো। অনেকগুলো সম্ভাব্য ফলাফল থেকে একটাকে বেছে নেওয়ার জন্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে একটা একটা করে ফলাফলকে বিবেচনা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া। উপরের রিজনিং সম্পর্কিত উদাহরণেও প্রসেস অব এলিমিনেশন অনুসরণ করা হয়েছে। আর এখানেই এসে মিলবন্ধন ঘটে হিস্টোরিকাল সাইন্স এবং অপারেশনাল সাইন্সের।
আমরা এতসময়ে সঠিক ফলাফল নির্ধারণের জন্য রিজনিংয়ের সাথে যে তথ্য-উপাত্ত মিলানোর কথা জানলাম সেসব তথ্য উপাত্ত আসে অপারেশনাল সাইন্স থেকে। বিভিন্ন পৃথক পৃথক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের মধ্যে সেতু রচনা করে হিস্টোরিকাল সাইন্স, তারপর পরবর্তী গবেষণার সম্ভাব্য ফলাফল অনুমান করে। সম্ভাব্য ফলাফলগুলো যদি একাধিক হয় তবে দেখার বিষয় পরবর্তী গবেষণায় কী ফলাফল উঠে আসে এবং সেটা কোন কোন সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখে। এভাবে বারবার পরীক্ষণে পাওয়া তথ্য উপাত্ত মিলিয়ে মিলিয়ে শেষে একটা সম্ভাবনাই টিকে থাকে যেটা আর কোনো গবেষণায় বিপরীত ফলাফল দেয়না, ভূল প্রমাণিত হয়না। যতক্ষণ না এরূপ একটা সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসে যেটা সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সামর্থ্য রাখে ততক্ষণ সবগুলো সম্ভাবনাই আমলে নেওয়া হয় কম-বেশি। উপরে হিস্টোরিকাল সাইন্সের কাজ করার পদ্ধতি বিশ্লেষণের সময় একটা কথা বারবার মনে নড়াচড়া দিয়ে উঠছিলো।
বিজ্ঞানী হওয়ার প্রথম শর্ত সম্ভবত গোয়েন্দা হওয়া, শুধু তথ্য-উপাত্ত আর জ্ঞান দিয়ে সব দায় মিটে যায় না। বিজ্ঞানীরা একেকজন সুদক্ষ গোয়েন্দা, তারা অনুসন্ধান করে করে চলেছেন এই মহাবিশ্বের বিভিন্ন ঘটনার অতীত কিংবা বর্তমান কারণ এবং সেইসব ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব।
হিস্টোরিকাল সাইন্স কী আমাদের পুরোপুরি সত্য জানাতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের প্রশ্নটা সঠিকভাবে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। এই প্রশ্ন শুনে যদি আপনার মনে হ্যাঁ/না কোনোটার উদয় ঘটে তাহলে আপনি ভুল পথে এগোচ্ছেন। এই প্রশ্নের উত্তর কখনোই হ্যাঁ-না এই দুই শব্দের যেকোনো একটি ব্যবহার করে দেওয়ার মতো কোনো প্রশ্ন না। হিস্টোরিকাল সাইন্সের অন্তর্ভুক্ত একেক ক্ষেত্রের একেক রহস্যের সমাধানের পক্ষে এভিডেন্সের কমবেশি পার্থক্য রয়েছে। কোনো কোনো ঘটনার ব্যাখা হয়তো কয়েক হাজার এভিডেন্সের আগুনে পুড়ে নিঁখাত স্বর্ণে পরিণত হয়েছে, অন্যদিকে কোনো ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য এখনো পর্যাপ্ত এভিডেন্স পাওয়াই যায়নি। তাই কয়েক হাজার এভিডেন্স নিজের ঝুলিতে নিয়ে বসে থাকা প্রথম ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখা যদি শতভাগ রিলায়েবল হয় বিজ্ঞানীদের কাছে তবে পরের ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখা তুলনামূলক কম রিলায়েবল হবে প্রমাণের ঘাটতির কারণে। এজন্য পুরো হিস্টোরিকাল সাইন্স কতটা সফল নিজের জায়গায় তা কখনোই আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন না, পারবেন না এই পুরো ক্ষেত্রটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে। বরং আপনাকে প্রথমে নির্দিষ্ট প্রশ্ন বাছাই করতে হবে, তারপর বিজ্ঞান ঐ প্রশ্ন নিয়ে কী কী বক্তব্য পেশ করতে সক্ষম তা জানতে হবে, সেইসব বক্তব্যের কোনো বিকল্প সম্ভাবনাও পেশ করা হয়েছে কিনা জানতে হবে, কী কী এভিডেন্সের উপর ভিত্তি করে বাকী সকল সম্ভাবনা বাতিল করে এই একটা ব্যাখা বিজ্ঞানীরা মেনে নিয়েছেন সেটা বুঝতে হবে। এরপর খুঁজবেন আপনার মনে এখনো কী কী সংশয় রয়ে গেছে, সেগুলোর উত্তর পাওয়া যাচ্ছে কীনা, এরপর আপনি বিজ্ঞানীদের ঐ ব্যাখা কতটা গ্রহণযোগ্য সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই আপনার সিদ্ধান্তের পক্ষে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক যুক্তি এবং তথ্য থাকতে হবে যা আপনাকে বিজ্ঞানী বা গবেষকদের ব্যাখা না মানতে সাহস জুগিয়েছে।
এবার আমরা আসি দ্বিতীয় ঘটনায়। দ্বিতীয় ঘটনায় আমরা একটা মজার প্রশ্ন উত্থাপন করেছি। এই প্রশ্নটা দিয়েই আমরা ব্যাখ্যা করবো হিস্টোরিকাল সায়েন্স আদতে কিভাবে কাজ করে এবং আমাদের কিভাবে হিস্টোরিকাল সায়েন্স চর্চা করা উচিত। প্রশ্নটা ছিলো, “ডাইনোসরের যে লম্বা রূপসী চুল ছিলো না, তা আমরা কীভাবে বুঝলাম?” চলুন, যুক্তিপ্রয়োগ শুরু করা যাক।
→ ডাইনোসর এক ধরনের সরীসৃপ। আমরা তথা মানুষেরা স্তন্যপায়ী। সরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ী- উভয়েই অ্যামনিওট (প্রকৃত ডিম পারতে সক্ষম প্রাণী-গোষ্ঠী) হতে বিবর্তিত দুটি ভিন্ন শ্রেণী।
→ স্তন্যপায়ীদের আদি পূর্বপুরুষ আসলে সিন্যাপসিডরা। এরাও কিছুটা সরীসৃপদের মতোই দেখতে। সিন্যাপসিডরা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে সরীসৃপ হতে আলাদা হয়েছে। আজকেরদিনে সরীসৃপ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সকল প্রাণীর দিকে একটু খেয়াল করে দেখুন। কোনো সরীসৃপ কিংবা সরীসৃপ হতে বিবর্তিত প্রাণিগোষ্ঠীর (যেমন: পাখি) কিন্তু চুল নেই, কোনো প্রাণীরই না। অর্থাৎ চুল সৃষ্টির জন্য যে জেনেটিক অ্যালিলগুলো প্রয়োজন তা সরীসৃপে অনুপস্থিত। এজন্য সরীসৃপদের চুল গজায় না।
→ সিন্যাপসিডরা সরীসৃপ হতে আলাদা হওয়ার পর আরও কোটি বছর কেটে গেলো। এই কোটিবছরে সিন্যাপসিডরাও বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে নতুন নতুন প্রাণী-গোষ্ঠী তৈরী হলো। এরকমই একটা গোষ্ঠী ছিলো থেরাপসিড, এই থেরাপসিড হতেই পরবর্তীতে সাইনোডন্ট গোষ্ঠী উদ্ভূত হয়। আর চুলের উৎপত্তিও প্রথম বিবর্তনের ধারায় আসে এই সাইনোডন্টের মধ্যেই যাদের সরাসরি একমাত্র উত্তরপুরুষ আমরা- স্তন্যপায়ীরা।
→ সাইনোডন্টদের মধ্যে ২৩ থেকে ২৫ কোটি বছর আগে চুলের মতো একটা গঠনের উদ্ভব ঘটে যেটাকে বলা হয় প্রোটো হেয়ার। আর এটা শুধু কোনো অনুমান নয়, এর পক্ষে ফসিল এভিডেন্সও রয়েছে। চুল সাধারণত ফসিলে রূপান্তরিত না হলেও দুর্লভ পরিস্থিতিতে চুলের ফসিলও পাওয়া যায় (যেমন অ্যাম্বারে)। প্রথম চুলের উদ্ভবের পরবর্তী ৩ থেকে ৫ কোটি বছরের মধ্যে পূর্ণ কার্যকর চুল বিবর্তনে নিজেদের পাকাপোক্ত জায়গা দখল করে নেয়। এর কারণ টিকে থাকার লড়াইয়ে এদের বিশেষ ভূমিকা। এরা উষ্ণ রক্ত প্রাণীদের শরীরে তাপ অন্তরক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে, এরা পরিবেশের বিভিন্ন অনুভূতি সহজে পাওয়ায় ভূমিকা রেখেছে, চুলের বৈশিষ্ট্য দেখে কে নিজের শিকার আর কে শিকারী তা চিনতে ভূমিকা রেখেছে। এত সুবিধা যে বৈশিষ্ট্যের সে বৈশিষ্ট্য বিবর্তনে দ্রুত স্থায়ী হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
তাহলে মোটমাট ফলাফল কী দাঁড়ালো? সরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ীদের বিচ্ছেদ বহু আগেই ঘটেছে। ফলে স্তন্যপায়ীদের পূর্বপুরুষদের শরীরে মিউটেশনের ফলে যেসকল নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য কালের তালে উদ্ভূত হয়েছে তা সরীসৃপরা কখনো পায়নি। এজন্য তাদের এসব বৈশিষ্ট্য নেই। চুলও এমনই একটা অনন্য বৈশিষ্ট্য যেটা শুধু ম্যামালদের মধ্যে পাওয়া যায়, কোনো সরীসৃপে না। ফলে একটা ডাইনোসর দেখতে কেমন ছিলো আমরা যখন সেটা কল্পনা করতে বসি তখন আমরা সেটার লম্বা লম্বা চুল ছিলো এটা চিন্তা করিনা, করবোও না। এটাই হিস্টরিকাল সায়েন্সের কৃতিত্ব, এটাই আল্টিমেট কজেশনের কৃতিত্ব, এটাই বিজ্ঞানের কৃতিত্ব।
লেখক: তিকতালিকীয় সদস্যবৃন্দ
কপিরাইট: তিকতালিক-Tiktaalik