মলিকিউলার ক্লকঃ ইতিহাস উন্মোচনের কৌশল

মলিকিউলার ক্লকঃ ইতিহাস উন্মোচনের কৌশল

আজকে এই প্রবন্ধের শুরু করবো লোকপ্রিয় একটি প্রশ্ন দিয়ে। প্রজাতি বিবেচনায় আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী আত্মীয় কে? এই প্রশ্ন যতবেশি লোকপ্রিয়, ততবেশি সংখ্যক মানুষ এর ভুল কিংবা আংশিক সঠিক উত্তর জানে। এই প্রশ্ন শুনলেই অনেক বাঙালির (বিশেষত বাংলাদেশী) প্রথমেই মাথায় আসে, “আসছে বানরের জাত আবার বানরের গল্প শোনাতে।” মজার বিষয় হলো, আজকে যে গল্পটা আমি আপনাদের শুনাতে চলেছি সেই গল্পের প্রথম অংশেই আমরা দেখতে পাবো এই বানরই আমাদের সবথেকে দূরবর্তী আত্মীয়দের একজন। বাস্তবে, কখনোই কেউ দাবী করেনি আমরা তথা মানুষেরা বানর থেকে এসেছি কিংবা বানরই আমাদের সবথেকে নিকটবর্তী আত্মীয়। আমাদের সবথেকে নিকটবর্তী আত্মীয় হলো এইপ’রা। এই এইপ’রা দেখতে ঠিক বানরের মতো হলেও মোটেও এদের বানর বলা যাবে না। বরং বলা যায়, এরা বানরসদৃশ। এই বানরসদৃশ শব্দটা মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তিত হয়ে আজকের ‘মানুষ বানর থেকে আসছে’ উক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে বলে ব্যক্তিগত ধারণা আমার। বানর এবং এইপ’দের মধ্যে যে বৈসাদৃশ্য সহজেই চোখে পড়ে তা হলো “লেজ”, বানরের পশ্চাৎদেশে এক ঝুলন্ত লম্বা লেজ থাকে যা এইপ’দের পশ্চাৎদেশে অনুপস্থিত। এইপ হিসেবে স্বীকৃত এরূপ তিন সদস্যকে আমরা ভালোভাবে চিনি বা জীবনে একবার হলেও টেলিভিশন, ইন্টারনেটে দেখেছি। শিম্পাঞ্জি, গরিলা এবং আমরা তথা মানুষ।

একটু ভালোভাবে দৃষ্টিপাত করলেই যে কারোরই বুঝে আসার কথা- চোখ, কান, মাথা, হাত, পা, শরীরের গঠন সবকিছুতেই প্রত্যক্ষ মিল রয়েছে এই তিন প্রজাতির প্রাণীর। বেশ কিছু অমিলও রয়েছে; যেমন আমাদের মাথার আয়তন তুলনামূলক বেশি, শিম্পাঞ্জিদের ঠোঁট অনেক বেশি বড়, মুখ অনেক বড় হা করতে পারে, আমাদের হাঁটার সময় যেমন মেরুদণ্ড একদম সোজা করে রাখি বাকীরা সেটা পারেনা, বাকীরা সাধারণত দুপায়ে হাঁটেও না, বেশিরভাগ সময়ে চার হাত-পা দিয়ে হাঁটে, শরীরে থাকা লোমের ঘনত্বেও নজরে আসার মতো পার্থক্য দেখা যায়। এগুলো না হয় গঠনগত পার্থক্য। আচরণগত পার্থক্য এবং কগনিটিভ বিবর্তন যে মানবসভ্যতাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে তা আসলে বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবুও আমরা যদি প্রাণীজগতের অন্যান্য প্রাণীর দিকে তাকাই, আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী আত্মীয় বলে গণ্য হবে এই শিম্পাঞ্জি আর গরিলাই। এইপ’দেরই আরেক সদস্য হলো গিবন। এদের হাত অনেক বেশি লম্বা, যেখানে শরীরের আকার অনেক অনেক বেশি ছোটো। এদের গড় উচ্চতা সাধারণত ১.৫-২ ফুট হয়ে থাকে যেখানে কিছু প্রজাতির গীবনের উচ্চতা ৩ ফুটের কাছাকাছি যায়। আমাদের স্যাপিয়েন্সদের গড় উচ্চতা এক্ষেত্রে ৫.৫ ফুটের আশেপাশে হয়ে থাকে।

এই যে শুরুতেই আমরা বানরকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলাম, বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে দেখালাম মানুষের সাথে আসলে বানরের সরাসরি কোনো আত্মীয়তাই নেই- এই মুদ্রার অপর পিঠও রয়েছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে আমরা আসলে অন্যান্য স্তন্যপায়ী থেকে অনেক বেশিই আলাদা। “আমরা” সম্বোধন দ্বারা এই পরিচ্ছেদে এইপ বুঝানো হয়েছে, মানুষ এইপ’দেরই একজন। আমাদের (এইপ’দের) হাত কিংবা পায়ের নখ আসলে গোড়া থেকে আগা অবদি প্রায় সমতল। যেখানে অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের নখের বদলে থাকে নখর, যা তাদের থাবা দিতে, আত্মরক্ষায় সহায়তা প্রদান করে। আমাদের (এইপ’দের) হাতের গঠন এমন যে আমরা কোনো কিছু মুষ্টিবদ্ধ করে ধরতে পারি শরীরের সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে, কারণ আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি বাকি স্তন্যপায়ীদের থেকে আলাদা। কোনো কিছু ধরার সময় আমাদের চার আঙ্গুল বস্তুর ডানদিকে অবস্থান করলে বৃদ্ধাঙ্গুলি অবস্থান করে বামদিকে, ফলে বস্তুকে আঁকড়ে ধরতে সুবিধা হয়। এজন্য এইপ’দের হাতকে বলা হয় প্রিহেনসাইল। আমাদের (এইপ’দের) শিশ্নও সবার থেকে আলাদা। স্তন্যপায়ীদের শিশ্ন যেখানে উদরের সাথে জন্মগতভাবে আটকে থাকে, আমাদের (এইপ’দের) শিশ্ন সেখানে উন্মুক্ত, অভিকর্ষের টানে ভূমির দিকে অগ্রমুখ করে মুক্তভাবে ঝুলে থাকে। এই যে এইপ’দের এতগুলো অনন্য বৈশিষ্ট্য বললাম এই সকল বৈশিষ্ট্য বানরের মধ্যেও দেখা যায়। হ্যাঁ, অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের থেকে বানর আর এইপরা আলাদা, অনেকগুলো অনন্য বৈশিষ্ট্য এদের আছে। এইসকল অনন্য বৈশিষ্ট্যধারী স্তন্যপায়ীদের একসাথে বলা হয় প্রাইমেট। প্রাইমেট শব্দটা এসেছে প্রাইমাস থেকে যার অর্থ গুরুত্বপূর্ণ বা প্রধান। আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মের বহু আগেই দ্বিতীয় শতকের গ্রীক চিকিৎসক গ্যালেন শুধুমাত্র বিভিন্ন প্রাণীর শরীর কেটে কুটে ভিতরের গঠন দেখেই এই সিদ্ধান্তে চলে এসেছিলেন, প্রকৃতিতে মানুষ এবং বানর আসলে খুব নিকটবর্তী প্রাণী। তিনি দেখেছিলেন- পেশি, ধমনী, নাড়িভুঁড়ি, শিরা উপশিরা, বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গের অবস্থান, এমনকি হাঁড়ের গঠন অবদি মিলে যায় মানুষ এবং বানরের। যাহোক, উপর্যুক্ত আলোচনার উপসংহার যদি চিন্তা করি তবে বলা যায়-


১) মানুষের সবথেকে নিকটবর্তী প্রাণী শিম্পাঞ্জি এবং গরিলা। আমাদের একই পূর্বপুরুষ হতে আগমণ। আবার মানুষ, শিম্পাঞ্জি, গরিলার তুলনামূলক নিকটবর্তী প্রাণী বাকিসকল এইপ’রা যেমন গিবন। সকল এইপ একই পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত।


২) এইপ, বানর এবং অন্যান্য প্রাইমেটরা আবার স্তন্যপায়ী শ্রেণীর মধ্যে সবথেকে নিকটবর্তী। সকল প্রাইমেটের বিবর্তন একই স্তন্যপায়ী পূর্বপুরুষ থেকে। কিন্তু বানর আর মানুষের পূর্বপুরুষ সরাসরি এক না। এজন্য বানরের সাথে মানুষের আত্মীয়তা এতটাও কাছের না যতটা অধিকাংশ দেশী পণ্ডিতরা মনে করেন।


এবার আমাদের দ্বিতীয় প্রশ্ন এবং প্রবন্ধের মূল বিষয়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় চলে এসেছে। এইপ’দের মধ্যে আমরা আসলে কার সবথেকে বেশি নিকটবর্তী? এবং ঠিক কতবছর আগে বিবর্তনের ধারায় আমরা তাদের থেকে আলাদা হয়েছি? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমরা “উত্তর খোঁজার পদ্ধতিটা” একটু বোঝার চেষ্টা করবো। এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত ফসিলের উপর নির্ভরতা অনেক বেশি দেখা যায়। এই পদ্ধতিতে দুইটা ধাপ থাকে। প্রথম ধাপে, এমন ফসিল খুঁজে বের করতে হয় যা একই সাথে দুইটা ভিন্ন প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বহন করে। এরূপ ফসিলকে বলে “ট্রানজিশনাল ফসিল।” দ্বিতীয় ধাপে, এই ট্রানজিশনাল ফসিলের বয়স নির্ধারণ করতে হয়। যার মাধ্যমে বোঝা যায়, দুই ভিন্ন প্রজাতির বৈশিষ্ট্যওয়ালা এই প্রাণী আসলে কত বছর আগে পৃথিবীতে বিচরণ করেছিলো। একটা উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টা পরিষ্কার করি। ধরুন, মানুষের সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রাণী শিম্পাঞ্জি। এর অর্থ মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির একজন সাধারণ পূর্বপুরুষ থাকবে যার থেকে আলাদা হয়ে এই দুই প্রাণী বিবর্তিত হয়েছে। এই সাধারণ পূর্বপুরুষের ফসিলই ‘ট্রানজিশনাল ফসিল’। এই ফসিল খুঁজে পাওয়ার অর্থ, আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী। যদি মানুষ-শিম্পাঞ্জির বদলে মানুষ-গরিলার ফসিল পাওয়া যায় তো সেক্ষেত্রে উপসংহার আসবে গরিলা মানুষের সবথেকে নিকটবর্তী প্রাণী।

যাহোক, এরপর প্রাপ্ত ফসিলের কার্বন ডেটিং কিংবা অন্যান্য প্রচলিত পদ্ধতিতে বয়স নির্ধারণ করা হবে। ফসিলের বয়স থেকে জানা যায় কত বছর আগে এই সাধারণ পূর্বপুরুষ পৃথিবীর বুকে ছিলো এবং কত বছর আগে এই পূর্বপুরুষ থেকে মানুষ এবং তার নিকটবর্তী আত্মীয় আলাদা হয়েছিলো সেটা।
যাহোক, এই ফসিল ব্যবহার করে আমাদের দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আসলে সম্ভব ছিলো না। এর কারণ ৫-১৪ মিলিয়ন বছর আগের তেমন কোনো এইপ ফসিল খুঁজেই পাওয়া যায়নি যেটাকে মানুষের পূর্বপুরুষের ফসিল বলা চলে। এজন্য মানুষের পরিচয় নির্ধারণে অন্য উপায় খুঁজতে শুরু করেন বিশেষজ্ঞরা। এই উপায় সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে মলিকিউলার বায়োলজি থেকে উঠে আসে সত্তরের দশকের আশেপাশে। মলিকিউলার বায়োলজিস্টরা অনুধাবন করেন, সকল জীবের দৈহিক গঠনে এমন কিছু রাসায়নিক অণু থাকে যা আমরা ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এরকম অণু হিসেবে আমরা DNA, অ্যামাইনো অ্যাসিড, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ এবং গ্লোবিন স্যুডোজিন ডিএনএ কে বিবেচনা করতে পারি। এর মধ্যে ডিএনএ, অ্যামাইনো অ্যাসিড সার্বজনীন অর্থাৎ সকল স্তরের সকল জীবেই এদের উপস্থিতি রয়েছে।

এই মলিকিউলার ক্লক ব্যবহার করার জন্য দুইটা বিষয় আগে নিশ্চিত হওয়া লাগে। যে মলিকিউল নিয়ে কাজ করা হবে সময়ের সাপেক্ষে তার পরিবর্তনের হার ধ্রুব কিনা এবং কতটুকু পরিবর্তন হতে কতটুকু সময় লাগে সেটা। ধরুন, ফসিল থেকে গবেষণা করে আপনি জানেন বাঘ এবং সিংহ একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়েছে এবং সম্পূর্ণ দুই ভিন্ন প্রাণী হিসেবে বিবর্তিত হচ্ছে পাঁচ মিলিয়ন বছর হয়ে গেছে। এবার আপনি সিংহ এবং বাঘের শরীর থেকে উপর্যুক্ত মলিকিউল থেকে যেকোনো একটি নিলেন, ধরলাম সেটা DNA, এবার দেখা গেলো সিংহ এবং বাঘের DNA তে ৯৯% মিল রয়েছে। পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে যখন বাঘ-সিংহ আলাদা প্রজাতি ছিলো না তখন কিন্তু ১০০% ই একই ছিলো। অর্থাৎ DNA তে ১% পার্থক্য সৃষ্টি হতে সময় লেগেছে পাঁচ মিলিয়ন বছর। এইটুকুই ইনাফ। এবার আপনি দুনিয়ার যেকোনো দুই প্রাণীর পূর্বপুরুষের হিসাব বের করতে পারবেন। যদি X এবং Y এর DNA তে ৩% অমিল থাকে এর অর্থ X-Y এর সাধারণ পূর্বপুরুষ পনেরো মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে ছিলো। আবার X-Z এর DNA ৬% অমিল থাকার অর্থ এদের পূর্বপুরুষ ৩০ মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে বিরাজ করতো। এই হিসাব থেকে আরও বুঝা যায় X, Y, Z এর মধ্যে X ও Y নিকটবর্তী আত্মীয় যেখানে Z দূরবর্তী।


এই মলিকিউলার ঘড়ির প্রয়োগ সর্বপ্রথম করেন শিবলী এবং আলকুইস্ট ১৯৭৩ সালে এবং ফলাফল প্রকাশ করেন ১৯৮০ সালে। তারা এই পদ্ধতি পাখির বেলায় ব্যবহার করেন, কারণ পাখির গঠন এবং আচরণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একই হয়। পাখির ওড়া, উড়তে উড়তে পোকা শিকার করা- এসব আচরণ একই হওয়ায় এদের শারীরিক গঠনে এমন আহামরী কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়না যেটা দ্বারা বোঝা সম্ভব কোন প্রজাতির পাখি কার নিকটবর্তী আত্মীয়। এই সমস্যার সমাধানেই শিবলী এবং আলকুইস্ট সাত বছর যাবৎ প্রায় ১৭০০ প্রজাতির পরিচয় নির্ধারণ করেন। এরপর ১৯৮৪ সালে অবশেষে তারা মানুষের নিকটবর্তী আত্মীয় কে হতে পারে তা নিয়ে বিস্তর গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন। তারা মানুষ, দুই প্রজাতির শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাংওটাং এবং সাত প্রজাতির বানর নিয়ে এই গবেষণা সম্পন্ন করেন। তাদের পদ্ধতিতে, তারা দুই প্রজাতির ডিএনএ-র গলনাংক আলাদা আলাদা করে নির্ধারণ করেন। এরপর, দুই প্রজাতির ডিএনএ মিশ্রণের গলনাংক নির্ধারণ করে। সবসময় বিশুদ্ধ ডিএনএ অপেক্ষা মিশ্রিত ডিএনএ-র গলনাংক কম হয়ে থাকে। মিশ্রণের ফলে ডিএনএ-র গলনাংক যত কেলভিন কমে যাবে ঠিক তত পার্সেন্ট পার্থক্য হবে উভয়ের ডিএনএ তে। এই পদ্ধতিতে হিসাব করলে দেখা যায়-


এইপ এবং বানর → ৭.৩% পার্থক্য প্রায়
গরিলা এবং ওরাংওটাং → ৩.৬% পার্থক্য প্রায়
দুই গিবন প্রজাতি → ২.২% পার্থক্য প্রায়
দুই শিম্পাঞ্জি প্রজাতি → ০.৭% পার্থক্য প্রায়
মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি → ১.৬% পার্থক্য প্রায়
মানুষ এবং গরিলা → ২.৩% পার্থক্য প্রায়


এবার এই পার্থক্য থেকে সব প্রজাতির বয়স হিসাব করার সময়। ফসিল গবেষণা থেকে শিবলী এবং আলকুইস্ট আগে থেকেই জানতেন বানর এবং এইপ প্রায় ২৫-৩০ মিলিয়ন বছর আগে আলাদা হয়ে গেছে। এই ২৫-৩০ মিলিয়ন বছরে ডিএনএ তে পার্থক্য আসে ৭.৩%। অর্থাৎ ১% পার্থক্য আসতে সময় লাগে গড়পড়তায় ৪ মিলিয়ন বছর। আবার ওরাংওটাং এবং গরিলা আলাদা হয়েছে ১২-১৬ মিলিয়ন বছর আগে। তাদের ডিএনএ তে পার্থক্য ৩.৬%, এক্ষেত্রেও ১% পার্থক্য আসতে সময় লেগেছে ৪ মিলিয়ন বছরের আশেপাশে। উভয়ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের একই হার পাওয়ার অর্থ হলো- মলিকিউলের পরিবর্তনের হার ধ্রুব এবং ১% পরিবর্তন হতে ৪ মিলিয়ন বছর মতো সময় লাগে। তাহলে এবার কোন প্রজাতি কবে বিবর্তনের ধারায় পৃথক হয়েছে হিসাব করে ফেলা যাক। ডিএনএ-র পার্থক্যকে ৪ মিলিয়ন বছর দ্বারা গুণ করলেই পাওয়া যাবে পূর্ণাঙ্গ হিসাব।


এইপ এবং বানর → ২৯ মিলিয়ন বছর আগে (২৫-৩০ মিলিয়ন)
গরিলা এবং ওরাংওটাং → ১৪.৪ মিলিয়ন বছর আগে (১২-১৬ মিলিয়ন)
দুই গিবন প্রজাতি → ৮.৮ মিলিয়ন বছর আগে (৮-১০ মিলিয়ন)
দুই শিম্পাঞ্জি প্রজাতি → ২.৮ মিলিয়ন বছর আগে (৩ মিলিয়ন)
মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি → ৬.৪ মিলিয়ন বছর আগে (৬-৮ মিলিয়ন)
মানুষ এবং গরিলা → ৯.২ মিলিয়ন বছর আগে (৯ মিলিয়ন)


বন্ধনীতে লেখা মানগুলো জ্যারেড ডায়মন্ডের “The Rise & Fall of the Third Chimpanzee” বইয়ের প্রথম অধ্যায় থেকে সংগৃহীত। উপর্যুক্ত হিসাবনিকাশ থেকে পরিষ্কার, মানুষের সবচেয়ে নিকটবর্তী জীবিত আত্মীয় শিম্পাঞ্জি এবং উপরের তালিকায় সবচেয়ে দূরবর্তী আত্মীয় বানর। আজকের আলোচনা এই অবদিই। বিবর্তন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রযুক্তি, পদ্ধতি এবং হিসাবনিকাশ নিয়ে আরও আলোচনা হবে সামনে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *