কণা এবং প্রতিকণার ব্যাপারে আমরা কমবেশি সবাই একটু হলেও শুনেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝে মাঝেই কিছু জিনিস জনপ্রিয় হয়, এই যেমন “এক গ্রাম প্রতিকণার (অ্যান্টিপার্টিকেল) দাম হবে ২৭০০ ট্রিলিয়ন ডলার”, কিংবা “আমাদের পৃথিবীতে যত শক্তি আছে সব শক্তি খরচ করেও এক গ্রাম প্রতিকণা তৈরী সম্ভব না”। যাহোক, আজকে আমাদের আলোচনা জনপ্রিয় এসব ফেসবুক পোষ্ট নিয়ে না। প্রতিকণা আসলে কী? ধরুন ইলেকট্রন, এটা এক ধরনের ফার্মিওন কণা। এই কণার ভর আছে, আধান আছে, চৌম্বকক্ষেত্র তথা চৌম্বক ভ্রামক আছে। এবার একটা কণা চিন্তা করুন যার ঠিক একই পরিমাণ ভর, একই পরিমাণ আধান আর একই মানের চৌম্বক ভ্রামক রয়েছে কিন্তু আধান এবং ভ্রামকের চিহ্ন ইলেক্ট্রনের সম্পূর্ণ বিপরীত- এই কণাই ইলেক্ট্রনের প্রতিকণা। এর নাম দেওয়া হয়েছে পজিট্রন। একটা ইলেক্ট্রন এবং একটা পজিট্রন যখন একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন এরা একে অপরকে ধ্বংস করে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়, এই ঘটনাকে বলে অ্যানিহিলেশন। আবার পর্যাপ্ত শক্তি হতে একই সাথে কণা প্রতিকণা যুগল আকারে সৃষ্টি হতে পারে, এটাকে বলে পেয়ার প্রোডাকশন। এভাবেঃ
আপ বা ডাউন কোয়ার্ক → অ্যান্টি আপ বা ডাউনকোয়ার্ক
চার্ম কোয়ার্ক → অ্যান্টি চার্ম কোয়ার্ক
স্ট্রেঞ্জ কোয়ার্ক → অ্যান্টি স্ট্রেঞ্জ কোয়ার্ক
টপ বা বটম কোয়ার্ক → অ্যান্টি টপ বা বটম কোয়ার্ক
প্রোটন → অ্যান্টিপ্রোটন
ইলেক্ট্রন → পজিট্রন
মিউওন → অ্যান্টিমিউওন
টাউ → অ্যান্টিটাউ
ফোটন → ফোটন
হিগস → হিগস
গ্লওন → গ্লুওন
W বা Z বোসন → W বা Z বোসন
সকল ধরনের কণাকে সাধারণভাবে বোসন কণা এবং ফার্মিওন কণা এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। বোসন কণা তারা যাদের কোনো স্থির ভর নেই, যাদের স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা সর্বদা পূর্ণসংখ্যায় হয়ে থাকে এবং পলির বর্জন নীতি মেনে চলেনা, অর্থাৎ একই সাথে একাধিক বোসন কণা একই কোয়ান্টাম স্টেটে থাকতে পারে। অন্যদিকে, ফার্মিওন কণার বৈশিষ্ট্য বোসন কণা হতে আলাদা। এদের স্থির ভর আছে, স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা ভগ্নাংশে থাকে এবং পলির বর্জন নীতি মেনে চলে। কণা-প্রতিকণার তালিকা একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কিছু কণা নিজেই নিজের প্রতিকণা হিসেবে আচরণ করে থাকে, এরা সবাই বোসন কণা (ফোটন, হিগস, গ্লুওন, W-Z)। অর্থাৎ বোসন কণা নিজেরাই নিজেদের সাথে অ্যানিহিলেট করতে সক্ষম আবার পেয়ার প্রোডাকশনের সময় শক্তি হতে জোড়ায় জোড়ায় হুবহু একইরকম কণাই সৃষ্টি হয়।
ফার্মিওনগুলোর ক্ষেত্রে আবার গল্পটা আলাদা। এদের প্রত্যেকের প্রতিকণা আলাদা, আধান আলাদা, চৌম্বক মোমেন্টাম আলাদা। ১৯৩৭ সালে মেজোরানা একটা হাইপোথিসিস প্রদান করেন। তিনি বলেন, এমন ফার্মিওন কণাও থাকা সম্ভব যারা বোসনের মতো নিজেই নিজেদের ধ্বংস করে ফেলে। সাধারণত ফার্মিওন কণাগুলোর কোয়ান্টাম স্টেটে একটা জটিল সংখ্যা থাকে, আর এর প্রতিকণার কোয়ান্টাম স্টেটে থাকে অনুবন্ধী জটিল সংখ্যা। কিন্তু যদি এই কোয়ান্টাম স্টেটে জটিল ফাংশন না থেকে বাস্তব ফাংশন থাকে? বাস্তব ফাংশনের কোনো অনুবন্ধী ফাংশন হয়না (a+√b আকার ব্যতীত)। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কণা এবং প্রতিকণার একই কোয়ান্টাম স্টেট বিদ্যমান; অর্থাৎ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিকণা হিসেবে আচরণ করতে সক্ষম। এদেরকে বলা হয় মেজোরানা ফার্মিওন কণা। নিউট্রিনো এই ধরণের কণা বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের, যদিও এটা এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত নয়। তবে গবেষণা চলছে, ডবল ডিকে এক্সপেরিমেন্টের সাহায্যে প্রমাণ করা সম্ভব নিউট্রিনো আদতেই মেজোরানা ফার্মিওন কিনা হয়, ভূগর্ভস্থ গ্রান শ্যাশো গবেষণাগারে নিউট্রিনো কণার এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণের চেষ্টা জারি রয়েছে।
লেখক ও কপিরাইট: তিকতালিক-Tiktaalik