প্রথম স্কুবা ডাইভার?

প্রথম স্কুবা ডাইভার?

মানুষের স্বভাবগত একটা বৈশিষ্ট্য হলো- যে কোনো অজানা ঘটনার সবথেকে রহস্যময়, অলৌকিক, বিষ্ময়কর, জটিল সম্ভাব্য কারণটা নিয়ে কল্পনার জাল বোনা। সেই ঘটনার আরও যেসকল যুক্তিযুক্ত কারণ, ফলাফল হতে পারে সেটা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে আমরা অবচেতনভাবেই প্রথমে রহস্যময় কারণটা নিয়ে চিন্তা করতে বসি। এই যেমন ধরুন এই ছবিটা; ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শিত একটি অ্যাসিরীয় নিদর্শন, কমপক্ষে ৩,০০০ বছরের পুরাতন তো হবেই। এটি ইরাকের নিমরুদে আশুরনাসিরপাল (II) এর একটি প্রাসাদ খননকালে পাওয়া গিয়েছিলো। পাথরের ফলকে দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তি পানির নিচে সাঁতার কাটছেন, বাতাসভর্তি একটি ছাগলের চামড়ায় (অনেকে এটাকে উটের পাকস্থলী বলে উল্লেখ করেছেন) নিজের বুকের নিচে ধরে রেখে। মিডিয়ায় এই ছবি ভাইরাল হওয়ার পরে বিভিন্ন জায়গায় ‘প্রথম স্কুবা ডাইভার’, ‘প্রাচীনকালের মানুষরা কি আমাদের চেয়ে বেশি এগিয়ে ছিলো?’ শীর্ষে বহু বহু মন্তব্যের ছড়াছড়িও শুরু হয়েছে। অথচ কেউ একটু সাধারণভাবে জিনিসটা ভাবতেই পারছে না, প্রথম সাঁতার শেখার সময় বাচ্চাকে যেমন টায়ার বা বায়ুভর্তি বলয় দেওয়া হয় সেটার কাজ কী? প্লবতার সাহায্যে ভাসতে সাহায্য করা। ঠিক তাই ঘটছে এখানে। চামড়ার এই ব্যাগে বায়ু ভরে সাঁতার কাটছে নদীর উপরিভাগ দিয়ে। আর এটা বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

কোনো বিশেষজ্ঞ কখনোই এটাকে স্কুবা ডাইভিং বলেনই নি, বরং তারা প্রায় নিশ্চিত এই ব্যক্তি ডাইভার নন বরং একজন সাঁতারু। ইতিহাস ঘাটলে প্রাচীন ডাইভারদের (যাঁরা স্পঞ্জ এবং প্রবাল সংগ্রহ করতেন পানির গভীর হতে) বেশ ভালো বর্ণনা পাওয়া যায়। তাঁরা বাতাসে ভর্তি চামড়া নিয়ে ডুব দিতেন না, এর পিছনে খুবই সাধারণ কারণ, প্লবতা। আপনি শত চেষ্টা করলেও একটা ফুটবল নিয়ে পানির গভীরে ডুব দিতে পারবেন না এই একই কারণে, প্লবতা তথা উর্দ্ধমুখী বল, এই প্লবতা নিমজ্জনে ব্যাঘাত ঘটায়। এজন্য বাতাস ভর্তি চামড়ার থলে নিয়ে স্কুবা ডাইভিং করছে এই চিন্তা করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

এবার আরেকটি তথ্য দিই। একই প্রাসাদে একই থিমে এই চিত্র ছাড়াও আরেকটি চিত্র পাওয়া গিয়েছিলো, যেখানে সৈন্যদের চামড়া ব্যবহার করে সাঁতার কাটতে সাহায্য করার একটি স্পষ্ট চিত্র অঙ্কিত রয়েছে। এবার তিকতালিকের পক্ষ থেকে আপনাদের একটু চিন্তা করা শিখাই। যুক্তিবিদ্যায় অক্বামের ক্ষুর (Occam’s razor) নামে একটা নীতি আছে। এই নীতির মূলকথা- অনাবশ্যক বাহুল্য সর্বদাই বর্জনীয়। এই যে একটা চিত্রকল্প দেখে সম্ভাব্য অনেকগুলো মতবাদ দেওয়া যায়, এর মধ্যে প্রথমে খুঁজে দেখতে হবে সবথেকে যৌক্তিক এবং প্রমাণাদি সম্পন্ন মতবাদ কোনগুলো। যদি একাধিক মতবাদ এমন হয় তবে অপেক্ষাকৃত কম জটিল মতবাদই শ্রেয় বলে গণ্য হবে। এখানে স্কুবা ডাইভিং এর চিন্তার পিছনে না আছে পদার্থবিদ্যা আর না আছে ঐতিহাসিক কোনো প্রমাণাদি, অক্বামের ক্ষুর এই মতবাদকে শুরুতেই কেটে ফেলবে।

তথ্য সংগ্রহ, সম্পাদনা এবং লেখা: তিকতালিক-Tiktaalik

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *